ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

নেতা ও আমলার পার্থক্য বুঝছে না বিএনপি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৭
নেতা ও আমলার পার্থক্য বুঝছে না বিএনপি নেতা ও আমলার পার্থক্য বুঝছে না বিএনপি

ঢাকা: কর্নেল (অব.) এম আনোয়ারুল আজিম। বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর বিএনপির টিকিটে কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

অবসরপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা গত ৮ জুন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, দলীয় প্রধান তার প্রতি ‘ইনসাফ’ করেন নি।

তাকে না জানিয়ে তার এলাকায় ছাত্র ও যুবদলের কমিটি দেওয়া হয়েছে।
 
আনোয়ারুল আজিমের ভাষায়, আমি বিষয়গুলো হাইকমান্ডকে বার বার জানিয়েছি। ম্যাডামের সঙ্গে দু’বার দেখা করেছি, তিনি কোনো সদুত্তর দেন নি। যার দল করি, তার যদি ইনসাফ না থাকে, সে দল করে লাভ কী?’
 
কর্নেল (অব.) এম আনোয়ারুল আজিমের মতো ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর হঠাৎ করেই দল থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী।
 
অবশ্য দল ছেড়ে যাওয়ার আগে দলীয় প্রধানকে দোষারোপ করেন নি সাবেক এই পররাষ্ট্রসচিব। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে দলের মহাসচিব (সেই সময় ভারপ্রাপ্ত ছিলেন) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
 
তবে দল ও দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো বিষোদগার না করলেও কারামুক্তির পর বিএনপির কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে খালেদা জিয়ার ডাক না পেয়ে ক্ষোভ ও অভিমানে শমসের মবিন পদ ছেড়েছেন- সেটা বুঝতে বেশি দেরি হয় নি বিশ্লেষকদের।
 
অর্থাৎ সামান্য অস্বীকৃতি ও অবমূল্যায়ন মেনে নিতে পারেন নি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা এসব নেতা। দলীয় পদ ছেড়ে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন তারা। কেউ আবার ভেতর ভেতর ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন আগামীতে রাজনীতির রঙিন দুনিয়ায় ফেরার পথ সুগম করতে।
 
অথচ এই বিএনপিতেই অনেক পোড়খাওয়া নেতা রয়েছেন, যাদের রক্তের প্রতিটি কণায় মিশে আছে শুধুই রাজনীতি। এসব নেতা খালেদা জিয়ার ক্রমাগত অবমুল্যায়ন ও অবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্তের শিকার হয়েও দল ছেড়ে কোথাও যান নি।
 
দল এবং দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে করেন নি একটা নেতিবাচক মন্তব্য। মনে কষ্ট নিয়ে অপেক্ষা করছেন দলীয় প্রধানের সুবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্তের।
 
গত বছর অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের আগে চারদিকে রব ওঠে রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারি দলের চিফ হুইপ বর্ষিয়ান রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাচ্ছেন।
 
কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন পান নি মুক্তিযুদ্ধের এই অন্যতম সংগঠক। দল ও দলীয় প্রধানের কাছে এমন অবমূল্যায়নের শিকার হয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিবিদ মনোকষ্টে ভুগছেন। কিন্তু বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটা নেতিবাচক শব্দ উচ্চারণ করছেন না।
 
বরং তার নির্বাচনী এলাকার লোকজন ও অনুসারীরা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে চাইলে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন পরিষ্কার বলে দেন, ‘তোমরা এই কাজ করলে আমি চির দিনের জন্য রাজনীতি ছেড়ে দেব’।
 
বিএনপির আরেক পোড়খাওয়া নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানও খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পান নি যোগ্য মূল্যায়ন। অনেক জুনিয়র এবং অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য লোক স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পেলেও আব্দুল্লাহ আল নোমানের ঠাঁই হয়নি সেখানে।
 
এ নিয়ে মনে খেদ থাকলেও দল ছেড়ে যান নি আব্দুল্লাহ আল নোমান। করেন নি দল ও দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে কোনো বিষোদগার। উপরুন্ত যখন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে নীরবে নিভৃতে তা পালন করে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই শ্রমিক নেতা।  
 
শুধু প্রবীণ নয়, বেশ কিছু তরুণ নেতার সঙ্গেও অবিচেনাপ্রসূত আচরণ করেছেন খালেদা জিয়া। কিংবদন্তিতুল্য সাবেক ছাত্রনেতা নাজিমুদ্দিন আলম কোনো পদ পাননি। আশি ও নব্বই দশকের ছাত্রনেতা সাবেক সহ দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দফতর থেকে।
 
বিশ্লেষকরা বলছেন- ক্ষমতাবলয়ের মধ্য থেকে ৩৮ বছর আগে সেনা ছাউনিতে জন্ম নেওয়া বিএনপি এখনো নেতা, আমলা ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে পার্থক্য বুঝে উঠতে পারছে না। বার বার ধাক্কা খেয়েও শিক্ষা নিচ্ছে না দলটি। জন্মলগ্ন থেকেই দলটিতে আমলা, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা অথবা পেশাজীবীদের কদর ছিল। এ ধারা এখনো আছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৭
এজেড/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।