একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। তবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চান না। ওই নির্বাচন তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বর্জন করায় বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা উঠে। নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচন ও সংসদ নিয়েও প্রশ্ন উঠে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো কোনো দিক থেকে এ নিয়ে যে সমালোচনা ও বিতর্ক উঠে তা মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ ও এর নেতৃত্বাধীন সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়। এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ।
তবে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে যাবে না দলটি। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না বা কোনো ধরনের ছাড় দেবে না দলটি।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো আরও জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়ের পর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনেক কিছুই পাল্টে যাবে। সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতি মেনে নিয়েই বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসতে বাধ্য হবে বলেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিচার চলছে। মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হলে রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ সামনে চলে আসবে। বিচারের রায়ে সাজা হলে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি, পারবেন না সে বিষয়টিও সামনে চলে আসবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপিকে একটি সমঝোতায় আসতে হবে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ।
এদিকে আওয়ামী লীগের ওই সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির একটি বড় অংশই প্রস্তুত। তারা সাংবিধানিক বাস্তবতা মেনেই নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। শেষ পর্যন্ত এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের দিকে গেলে দলটি বিভক্ত হয়ে পড়বে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বর্তমান বিএনপি নির্বাচনে না এলেও বিএনপি নামেই দলের একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেবে।
এছাড়া সব দলের অংশগ্রহণেই আগামী নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলেও গত নির্বাচন থেকে এবারের নির্বাচনে আরও বেশি দল যাতে অংশ নেয় সে চেষ্টাও থাকবে দলটির। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তবে এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা কোনো মন্তব্য বা মতামত দিতে চাননি।
আদালতে কোনো ব্যক্তির সাজা হওয়ার পর তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আইনের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সংবিধানেই বলা আছে, আদালতে কারো সাজা হলে সেই সাজার পর তাকে আরও ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য। তবে উচ্চ আদালতে আপিল করলে সাজা যদি স্থগিত থাকে সেখানে একটি সুযোগ থেকে যায়। তারপরও ঝুঁকি থেকে যায়। শুধু আপিল করলেই হবে না, সাজা স্থগিত হতে হবে। সাজা স্থগিত না হলে তো সেটা চলমান থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
এসকে/জেডএস