ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

কূটনীতিকদের মানবাধিকারের ‘প্রামাণ্যচিত্র’ দেখালো বিএনপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৮
কূটনীতিকদের মানবাধিকারের ‘প্রামাণ্যচিত্র’ দেখালো বিএনপি বিএনপির গোলটেবিল আলোচনায় বিদেশি কূটনীতিকরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গোলটেবিল আলোচনায় বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নির্মিত ‘প্রামাণ্যচিত্র’ দেখালো বিএনপি।
 
 

বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় আয়োজিত ‘রাইট টু লাইফ, এ ফার ক্রাই ইন বাংলাদেশ: ২০০৯- জুন ২০১৮’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রায় ২০ মিনিট ধরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ‘প্রামাণ্যচিত্র’ প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জমান।
 
প্রামাণ্যচিত্রে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর গত সাড়ে নয় বছরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হয়। যেখানে ‘বিএনপির নেতাকর্মীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ হওয়ার লোকজনের স্বজনদের বক্তব্য, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট’ তুলে ধরা হয়।
 
এরমধ্যে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলম, নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার হাতে সাত জন, চট্টগ্রামের ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরু, যুবদল নেতা মোহাম্মদ আলম, ছাত্রদল নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ গুম ও খুন হয়ে যাওয়া লোকদের ছবি প্রদর্শন ও পরিবারের স্বজনদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
 
পরে কূটনীতিকদের হাতে ‘রাইট টু লাইফ, এ ফার ক্রাই ইন বাংলাদেশ: ২০০৯-২০১৭’ শীর্ষক একটি বই তুলে দেওয়া হয়। বইটির প্রকাশক বিএনপির থিংক ট্যাংক বলে পরিচিত ‘জি-নাইন’।  বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, পাশে অন্য অতিথিরা।  ছবি: বাংলানিউজঅনুষ্ঠানে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মানবাধিকার বিষয়ক সচিব মাইক ক্রেমার, ফ্রান্স দূতাবাসের উপ-প্রধান জ্যঁ-পিয়ের পঁশে, ভারতীয় হাইকমিশনের রাজনৈতিক বিভাগের শান্তনু মুখার্জিসহ কানাডা, সুইডেন, পাকিস্তান, ইরান এবং জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 
ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া সরকার: ফখরুল

পরে তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিগত দিনে পাঁচ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী হারিয়ে গেছে। ১০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সারাদেশে ৭৮ হাজার মামলায় ১৮ লাখ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজে এই ছবিগুলো দেখছি। মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে লাশ পড়ে থাকছে। এ বিষয়গুলিকে আমরা অনেকবার সামনে নিয়ে এসেছি। কিন্তু সরকার কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না।

কূটনীতিকদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনাদের সামনে যে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হলো, তারপর আর বেশি ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, আপনারা গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেখেছেন। আর আগামী নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়া গ্রহণযোগ্য হবে না।

এসময় তিনি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর ‘নির্যাতনের’ বিষয়ও তুলে ধরেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক ও বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর গণবিরোধী কার্যকলাপ এখন বীভৎসরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। সেজন্য সরকার জনগণের ভিতরের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে কোনো দাবির আওয়াজকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে দ্বিধা করে না এবং তাদের ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক দাবি অগ্রাহ্য করতেও পিছপা হয় না।

তিনি বলেন, চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা দূরের কথা, বরং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলার মাধ্যমে গুরুতর আহত করা ও পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানো কখনই সুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে না।  

তিনি অভিযোগ করেন, আজকে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের রিমাণ্ডে নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।  

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমান, মানবাধিকার কর্মী সেলিনা বেগম ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
 
মওদুদ আহমদ অভিযোগ করেন, মূল মামলায় উচ্চ আদালত থেকে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া জামিন পেলেও তাকে কয়েকটি ছোট মামলায় আটকে রাখা হয়েছে। নিম্ন-আদালত সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ হওয়ার কারণেই খালেদা জিয়াকে জামিনযোগ্য মামলায়ও জামিন দেওয়া হচ্ছে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৮
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।