ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

কোন্দলে জর্জরিত মহিলা দল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
কোন্দলে জর্জরিত মহিলা দল

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকলেও দলটির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের তৎপরতা তেমন চোখে পড়ছিলো না। কেন তাদের মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছিলো না, এ নিয়ে খোদ দলেরই অভ্যন্তরে কথা উঠলেও এখন সেসব ছাপিয়ে সামনে আসছে নতুন খবর। সংগঠনটি পুড়ছে অন্তর্কোন্দলে। কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রীদের মতভিন্নতাই এই কোন্দলের কারণ বলে জানাচ্ছে সংগঠনের নির্ভরযোগ্য সূত্র।

মহিলা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আফরোজা আব্বাস সভানেত্রী হওয়ার পর নেত্রীদের সঙ্গে তার মনোমালিন্য শুরু হয়। একক কর্তৃত্বে সংগঠন পরিচালনা করতে চাইলে ঢাকা মহানগর ও থানা পর্যায়ের নেত্রীরা নাখোশ হন।

ফলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রাজিয়া আলিমকে কারণ দর্শানোর (শো’কজ) নোটিশ দেওয়ার পর অন্তর্কোন্দল প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে একে অপরের প্রতি নানা মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন নেত্রীরা। যা গড়িয়েছে বিএনপির মহাসচিব পর্যন্ত। এমনকি আফরোজা আব্বাস কয়েকজন নেত্রীকে বহিষ্কার করতে চান বলেও জানা যায়, যদিও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হস্তক্ষেপে সেটা হয়নি।

জানা যায়, ১১ জুলাই রাজিয়াকে শো’কজ নোটিশ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ স্বাক্ষরিত শো’কজ নোটিশে ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ তোলা হয়।

ওই নোটিশে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরে আপনি দলের স্বার্থপরিপন্থী কাজ— যেমন নেতাকর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, অশালীন ভাষা ব্যবহার, সিনিয়র নেতাদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, কর্মীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, পদবাণিজ্য ও সভাপতি পদের অপব্যবহারসহ নানাবিধ নীতি-নৈতিকতাহীন কাজে জড়িত আছেন। এসব কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করার জন্য মৌখিকভাবে বারবার সতর্ক করার পরও আপনি এসব কাজ পরিহার করেননি। ’

চিঠিতে সাত দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়। অন্যথায় দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি হয়। এছাড়া নোটিশের জবাব না পাওয়া পর্যন্ত রাজিয়ার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির পদটি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিয়া আলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘শো’কজ নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে আমি জবাব দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেসব মিথ্যা ও বানোয়াট। সংগঠনবিরোধী কোনো কাজে আমি জড়িত নই। আমি নিজে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করে সব কথা বলেছি। দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। ’

তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর সবকিছু নিজেই করতে চাইছেন। তিনি কেন্দ্রীয় নেত্রী না-কি, মহানগরের নেত্রী তা বোঝা যাচ্ছে না।

রাজিয়া আলিম বলেন, ‘আমি মহানগর দক্ষিণের সভানেত্রী হিসেবে দক্ষিণের থানাগুলির কমিটি আমারই করার কথা। কয়েকটি কমিটি সুন্দরভাবে করাও হয়েছে। কিন্তু তিনি (আফরোজা) কেন্দ্রীয় সভানেত্রী হয়েও মহানগর দক্ষিণের সব কমিটি তার লোকদের দিয়ে করতে চাইছেন। বিশেষ করে শাহজাহানপুর কমিটিতে তার স্বামীর (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস) বোনকে সভানেত্রী করেছেন, এতে আমি কোনো আপত্তি করিনি। তারপরও তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। ’

এ বিষয়ে মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজিয়া আলিমকে শো’কজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। এখনও জবাব পাইনি। ’

কী কারণে এমন নোটিশ জানাতে চাইলে আফরোজা বলেন, ‘সেটা বলতে চাইছি  না। ’

যদিও অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহিলা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা একে অপরকে দোষারোপ করে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দিয়েই চলেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।