সিলেটে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং জেলার আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে পৃথক বৈঠককালে এ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন।
তিনি বলেন, সিলেট জেলা বিএনপির আওতাধীন উপজেলা ও পৌরসভার ইউনিট কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিভাজন নিরসনে বৈঠক হয়েছে।
কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেট সফরকালে বিষয়টি নিয়ে পৃথক বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে যেসব অভিযোগ এসেছে, তা তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান দেওয়া হবে বলে বিএনপি নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত নতুন কোনো কমিটি না দিতে বলা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে শাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, জেলার আওতাধীন কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়কের। তবে, তৃণমূল্যের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়ে কমিটি অনুমোদন দিলে এ নিয়ে কোনো বিতর্ক আসতো না।
ঘোষিত কমিটিগুলোর আহ্বায়কদের নিয়ে কারও মতপ্রার্থক্য না থাকলেও আহ্বায়ক কমিটির অনেক সদস্যের ব্যাপারে আপত্তি এসেছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
সম্প্রতি সিলেট জেলা বিএনপির আওতাধীন ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভার সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন জেলার আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। এরপর ঘোষিত কমিটিগুলো প্রত্যাখ্যান করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নয়জন সদস্য।
কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তারা আহ্বায়কের অপসারণও দাবি করেন।
এহেন পরিস্থিতিতে গত ০৮ মার্চ সিলেট সফরে আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি দফায় দফায় বৈঠক করেন দলের কেন্দ্রীয় সিলেটি নেতা ও জেলার আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে। বৈঠকে উঠে আসা অভিযোগ শোনেন এবং তা কেন্দ্রীয় নেতারা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলে আশ্বস্ত করেন।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নগরীর যতরপুরস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এমএ হকের বাসায় বৈঠক করেন ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। এসময় এমএ হক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ডা. এনামুল হক চৌধুরী, সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম।
পরে ওই বৈঠকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ূম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন, আব্দুল মান্নান, এমরান আহমদ চৌধুরী, আহমেদুর রহমান চৌধুরী মিলু, ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকীও অংশ নেন। এরপর নগরীর মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গেও বৈঠক করেন ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারে সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, অ্যাডভোকেট আব্দুল গফফার, আশিক উদ্দিন চৌধুরী, আলী আহমদ, আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, অধ্যাপিকা সামিয়া বেগম চৌধুরী, মঈনুল হক চৌধুরী, ফখরুল ইসলাম ফারুক, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, মামুনুর রশিদ মামুন, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, মাজহারুল ইসলাম ডালিম, আব্দুল আহাদ খান জামাল, আবুল কাশেম ও শামীম আহমদ প্রমুখ।
বৈঠকে উপস্থিত জেলা বিএনপির কয়েক নেতা বাংলানিউজকে জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে জেলা কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার আপন খেয়াল খুশি মতো কমিটি করায় তৃণমূল নেতাদের তোপের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি নিরাপত্তাহীনবোধ করে নিজের পদ থেকে অব্যহতি চান। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা কমিটিকে ও উপজেলা কমিটিকে আর কোনো কমিটি করা থেকে বিরত থাকতে বলেন।
এ বিষয়ে ডা. শাখাওয়াত হোসান জীবন আরও বলেন, ইউনিট কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার জেলা আহ্বায়কের রয়েছে। তবে কমিটিগুলোতে বাদ পড়াদের নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যে কারণে ইউনিট কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়তে-কমতে পারে। তবে আপাতত ইউনিট কমিটিগুলোর নেতারা কর্মসূচিতে নিজের পদবি ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কোনো ধরণের কমিটি দেওয়ার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
এনইউ/এসআরএস