তিনি বলেন, সরকারকে অনুরোধ করবো, প্রতিটি জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি দ্রুততম সময়ে করা হোক। প্রত্যেক জেলায় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
একইসঙ্গে দেশের বর্তমান এই দুর্যোগে সরকারের সঙ্গে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের এক হয়ে কাজ করা উচিত বলে মনে করেন বিএনপির এ নেতা।
সম্প্রতি গুলশানে নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপ করেন তিনি।
তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মো. মহসিন হোসেন।
বাংলানিউজ: বিশ্বব্যাপী করোনা সংকটের মধ্যে আপনার দলের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিকে কীভাবে দেখছেন?
আব্দুল লতিফ জনি: বিএনপি চেয়ারপারসন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারা মুক্তিতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের পবিত্র দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই সংকটময় সময়ে নির্বাহী আদেশে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
বাংলানিউজ: বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশবাসীর করণীয় কী?
আব্দুল লতিফ জনি: বর্তমান ডিজিটাল নেটওয়ার্কের যুগে সারা বিশ্বের খবরই মানুষ জানছে। ফলে করোনা ভাইরাস ঠেকাতে দেশের সব নাগরিককে সর্বাধিক সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
বাংলানিউজ: করোনা মোকাবেলায় সরকার যে দায়িত্ব পালন করছে সেটা আপনার দৃষ্টিতে কতটা সঠিক বলে মনে করেন।
আব্দুল লতিফ জনি: এখন রাজনীতির সময় নয়। দেশের জনগণকে কীভাবে এই মহাদুর্যোগ থেকে রক্ষা করা যায় সেটাই সবার চিন্তা করা উচিত। দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলতে পারি, আমাদেরকে মানবধর্মে উজ্জীবিত হয়ে ভেদাভেদ ভুলে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারের সঙ্গে জনগণকেও এ বিষয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকারকে অনুরোধ করব, প্রতিটি জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি দ্রুত করা হোক এবং জীবাণু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জেলার রোগী ওই জেলাতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। তাতে এক জেলার রোগী অন্য জেলায় স্থানান্তরের ফলে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবে না। ইউনিয়ন কেন্দ্রীক তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বয়ে কার্যকর কমিটি করা হলে করোনার নমুনা সংগ্রহ, সেবা প্রদান সহজ হবে।
বাংলানিউজ: যদিও সরকার ‘লকডাউন’ বলছে না। তবে ছুটি ঘোষণা করে জনগণকে ঘরে থাকতে বলছে। এই অঘোষিত লকডাউনে জনজীবন বিপর্যস্ত। এ থেকে কীভাবে উত্তরণ সম্ভব?
আব্দুল লতিফ জনি: গোটা বিশ্ব যেখানে লকডাউন হয়ে গেছে, সেখানে আমাদের আরও আগেই লকডাউন করা উচিত ছিলো। এ প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়ানো থেকে জনগণকে রক্ষা করার এছাড়া কোনো বিকল্প পন্থা নেই। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। চায়না, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স , জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার সব দেশেই লকডাউন চলছে। এতে জনগণের কষ্ট হলেও রোগবিস্তারের সহজ উপায়টা বন্ধ করা যাচ্ছে। আমি মনে করি, এ রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত রোগ বিস্তার প্রতিরোধ করাটাই উত্তম। যত কষ্টই হোক আমাদেরকে আরো কিছুদিন ধৈর্যধারণ করতে হবে। জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছাড়া সরকারের পক্ষে এ মহামারী থেকে দ্রুত উত্তরণ অসম্ভব।
বাংলানিউজ: বর্তমান প্রেক্ষাপটে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন সংকটে পড়েছে। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আব্দুল লতিফ জনি: পৃথিবীর সব দেশ জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য সামর্থ অনুযায়ী নানা রকম প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য নগদ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি বিনা সুদে ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের সুবিধার কথা প্রকাশ করেছে। আমাদের সরকারও তৈরি পোশাক শিল্পখাতের সঙ্গে জড়িত মালিক শ্রমিকদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা দরকার। শুধু সরকারের ওপর দায়িত্ব দিয়ে বসে থাকলে হবে না। বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে সচ্ছল নাগরিকদেরও উদার হস্তে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলানিউজ: করোনা পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন।
আব্দুল লতিফ জনি: এ মহাবিপদ থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত। এ ব্যপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় ছিলো। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অনেক দুর্যোগ মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা বিএনপির আছে। সরকার চাইলে বিএনপি সহযোগিীতা করতে প্রস্তুত।
বাংলানিউজ: করোনা পরিস্থিতিতে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের সার্বিক অবস্থা ও সর্বশেষ পরিস্থিতি ও জনগণের উদ্দেশে কিছু বলেন।
আব্দুল লতিফ জনি: সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা দেশের এই মহাসংকট মোকাবেলায় সক্ষম হবো বলে আশা রাখি। দলমত নির্বিশেষে দেশের সব জনগণকে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করার আহবান জানাবো। আশা করি আল্লাহ আমাদের এ বিপদ থেকে শিগগিরই মুক্তি দেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২০
এমএইচ/এজে