ঢাকা: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আসন্ন ২০২৩-২৪ বাজেটে পারিবারিক কৃষিকে স্বীকৃতি দেওয়াসহ গ্রামীণ নারী ও নৃগোষ্ঠীদের জন্য বরাদ্দের সুপারিশ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত।
বুধবার (৩১ মে) জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অংশীদারত্ব, বাজেট ভাবনা এবং মনিটরিং- শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে মূল প্রবন্ধে তিনি এসব সুপারিশ করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এইচডিআরসি) সহযোগিতায় এই সেমিনারের আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. আবুল বারকাত বলেন, বৈষম্য হ্রাস ও দারিদ্র বিমোচনে জাতীয় বাজেট যথেষ্ট কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে যদি বাজেটের মূল লক্ষ্য হয় বৈষম্য হ্রাস ও দারিদ্র বিমোচন। করোনার পরে দেশে বহুমাত্রিক দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। গত ২-৩ বছরে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নতুন দরিদ্র হয়েছে। এই নব্য দরিদ্ররা আছেন পারিবারিক কৃষিতে, গ্রামীণ নারী সমাজে, নৃগোষ্ঠী সমাজে, শহর-নগরের বস্তি ও স্বল্প আয়ের আবাসস্থলে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের আসন্ন বাজেট ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সে হিসাবে আমাদের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় ৪৪ হাজার ৯৫১ টাকা। এই টাকা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ, অবহেলিত মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। দেশে গ্রামীণ নারীদের সংখ্যা ৪১ শতাংশ। কিন্তু এই গ্রামীণ নারীরা বাজেটে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ পান। এটি চরম বাজেট বৈষম্য। নৃগোষ্ঠীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এক্ষেত্রেও বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। কৃষি, ভূমি, জলা সংস্কার হলে ৮২ শতাংশ মানুষ সুবিধা পাবে। তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। পারিবারিক কৃষিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এটি স্বীকৃতি পেলে কৃষি অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
কালো টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে পরিমাণ কালো টাকা আছে তার ২ শতাংশও যদি উদ্ধার করা হয়, তাহলে এর পরিমাণ হবে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এই কালো টাকা উদ্ধারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণ করে কীভাবে বাজেট প্রণয়ন করা যায়, মুদ্রাস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটিই হয়তো এবার বিবেচ্য হবে। আগে পার্লামেন্টারি মেম্বারদের নিয়ে একটি প্রাক বাজেট আলোচনা করা হতো, এখন আর তেমন করা হয় না। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। তারপর প্রধানমন্ত্রী তার বিবেচনা অনুযায়ী তা পাস করেন। তারপর সংসদে হ্যাঁ/না ভোটের মাধ্যমে বাজেট পাস করা হয়। কিন্তু সংসদ সদস্যের হ্যাঁ/না এর মধ্যে না রেখে বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত করলে আরও ভালো হতো।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্য কমিয়ে আনার বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গ্রামীণ নারী, নৃগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন অবহেলিত কমিউনিটিকে চিহ্নিত করে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা উচিত। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতে বাজেটে যাতে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, সংসদ সদস্যদের অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রের একটি টাকাও খরচ করা যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল বলেন, আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিয়ে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। আদিবাসীদের সাথে হরিজনসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকেও চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দিয়ে বাজেটের আওতায় আনা উচিত।
নিজেরা করি এর সমন্বয়কারী ও এএলআরডির চেয়ারম্যান খুশী কবিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিক উজ জামান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
এসসি/আরএইচ