ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

নিত্যপণ্যের তুলনায় আরেক দফা সস্তা হবে তামাকপণ্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৩
নিত্যপণ্যের তুলনায় আরেক দফা সস্তা হবে তামাকপণ্য

ঢাকা: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে নিত্যপণ্যের তুলনায় আরেক দফা সস্তা হয়ে পড়বে তামাকপণ্য বলে জানিয়েছে তামাকবিরোধী গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রকাশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে নিত্যপণ্যের তুলনায় আরেক দফা সস্তা হয়ে পড়বে তামাকপণ্য। তরুণরা তামাক ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হবে, তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা বাড়বে এবং একইসঙ্গে এ খাতে সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়বে। তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব আমলে না নিলে সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারও বাধাগ্রস্ত হবে।

প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শলাকার দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ পয়সা (১২.৫০ শতাংশ)। এই স্তরের করহার প্রায় অপরিবর্তিত রেখে কেবল মূল্যস্তর বাড়ানোর কারণে বর্ধিতমূল্যের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তামাক কোম্পানির পকেটে চলে যাবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৭ টাকা (৩.০৮ শতাংশ), উচ্চ স্তরে ১১১ টাকা থেকে ১১৩ টাকা (১.৮০ শতাংশ) এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৪২ টাকা থেকে ১৫০ টাকা (৫.৬৩ শতাংশ) নির্ধারণ করা হয়েছে।

সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রেখে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য যথাক্রমে পাঁচ টাকা ও তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিড়ির দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে দেশের ৮টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর এবং ময়মনসিংহ) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালের (৭ মার্চ) তুলনায় ২০২৩ সালে (৭ মার্চ) খোলা আটার দাম বেড়েছে ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির দাম ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ, চিনির দাম ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ডিমের দাম ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, গুঁড়া দুধের দাম ২১ দশমিক ২ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক পণ্যের দাম নামমাত্র বাড়ানো অথবা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরও সস্তা হয়ে পড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, নিত্যপণ্যের তুলনায় সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশ দখলে থাকা কম দামি সিগারেটের মূল্যস্তর বা খুচরা মূল্য সামান্য পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে এই স্তরের সিগারেটের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

প্রস্তাবিত বাজেটে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য আমদানির সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী দ্রুত চূড়ান্ত করার মাধ্যমে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৪ লাখ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হবে এবং সিগারেট খাত থেকে গতবছরের তুলনায় সরকারের ৯ হাজার ৬শ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। এই বাড়তি রাজস্ব আইএমএফের ঋণ শর্ত পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

এবারের বাজেটের মূল দর্শন হলো- ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। স্মার্ট বাংলাদেশ চারটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রথম বাজেট। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময়জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। তা সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৩
আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।