ঢাকা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সোপান থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত রচনার পর ‘ডিজিটাল’ টু ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’র জন্য সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার' আমাদের সরকারের বিশেষ অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর ব্যানারে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো দেশব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে। এর ব্যাপক ও বহুমুখী ব্যবহারে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে এবং সামাজিক গতিশীলতা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ' গঠনের কাজ শুরু করেছি। একই সঙ্গে আমাদের সামনে আছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের উপযোগী করে তোলা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমরা চারটি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কাজ করেছি। এ চারটি স্তম্ভ হল- কানেকটিভিটি, দক্ষ মানব সম্পদ, ই-গভর্নমেন্ট ও আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন। চারটি ক্ষেত্রেই আমাদের অগ্রগতি ও অর্জন অভূতপূর্ব। আমাদের সরকারের উদ্যোগে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ৭৮ হাজার টাকার স্থলে বর্তমানে ৩০০ টাকার কমে সংগৃহীত হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮ কোটির অধিক এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ও দক্ষতার বিস্তারের সুফল আমরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেখেছি। ওই সময়ে শিক্ষা, চিকিৎসা, কার্যসম্পাদন, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির নজিরবিহীন ব্যবহারে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর শক্তি পাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি এটি আমাদের একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, উদ্ভাবনী, বুদ্ধিদীপ্ত ও জ্ঞাননির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত তৈরি করে দিয়েছে। এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের বর্তমান উদ্যোগসমূহ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ (স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট ইকোনমি) এর রূপরেখা আমি দ্বিতীয় অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি। ইতোমধ্যে বিস্তারিত কার্যক্রমসহ 'স্মার্ট বাংলাদেশ: আইসিটি ২০৪১ মাস্টার প্ল্যান' প্রণয়ন করা হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনায় দেশের জনগণকে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে এবং প্রযোজ্য শতভাগ সেবাকে ডিজিটাইজ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জিত হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং জনগণ অতি সহজে সব সেবা গ্রহণ করতে পারবে। সব ক্ষেত্রে নাগরিকদের অংশগ্রহণে আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে শিক্ষা, জীবন-জীবিকা, দক্ষতা, চিকিৎসা, শিল্পসহ সব ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দেশের জনগণকে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন ‘স্মার্ট সিটিজেন' করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে ২০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিডারশিপ, সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি যুগোপযোগী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে আইটি ও আইটিইএস প্রতিষ্ঠানের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের।
এছাড়া সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ তৈরি ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ও ইনোভেশন সেন্টারের মাধ্যমে ৮০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবো। দেশের জনগণকে স্বচ্ছতার সঙ্গে ও সহজে সেবা দেওয়ায় নিশ্চিত হবে ‘স্মার্ট গভর্নমেন্ট' এর মূল লক্ষ্য। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উপযোগী করা প্রতিষ্ঠান যেমন- ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার তৈরি এবং সেবা দেওয়ার পদ্ধতি যেমন- তথ্য বাতায়ন পোর্টাল, মাইগভ প্ল্যাটফর্ম, ই-নথি, ই-নামজারি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইত্যাদি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করছি আমরা। স্মার্ট গভর্নমেন্ট এর আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব কাজে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে দ্রুততম সময়ে সর্বোত্তম সেবা দেবেন।
তিনি জানান, ‘স্মার্ট ইকোনমি’র অনুষঙ্গ হবে দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেন, ক্যাশলেস সোসাইটি, স্টার্ট-আপ ইত্যাদি। স্মার্ট ইকোনমিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ সুবিধা দেশের সব নাগরিকের জন্য সমানভাবে হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে। অন্যান্য প্রস্তুতির পাশাপাশি স্টার্ট-আপের বিকাশে ২০১৫ সাল থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ২ হাজার ৫০০ স্টার্ট-আপ রয়েছে এবং এ খাতে বিনিয়োগ এসেছে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষের। উদীয়মান স্টার্টআপে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য সরকার স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠন করেছে। স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ কর্তৃক মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘শতবর্ষের শত আশা’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১০০টি স্টার্টআপে বিনিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব স্টার্টআপে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সর্বোপরি ‘স্মার্ট সোসাইটি’ হবে এমন সোসাইটি, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ এর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবে এবং সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে। প্রসঙ্গত, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিলেও আমরা ‘সকলের সাথে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস