ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি এবং চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করে বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়ন বজায় রাখা এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হলো জাতীয় সংসদে।
সোমবার (২৬ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চলতি অর্থবছরের বাজেট পাসের জন্য প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
পরে গত ২৫ জুন পর্যন্ত প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যদের সাধারণ আলোচনার পর সোমবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাসের (নির্দিষ্টকরণ বিল) প্রস্তাব করেন এবং তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিরোধী দলের সদস্যদের ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো ভোটে নাকচ হয়ে যায়।
এ বাজেট পাসের আগে মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সংসদে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়। তবে এসব মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে বিরোধীদল ও স্বতন্ত্র মিলে ১০ জন সংসদ সদস্য মোট ৫০২টি ছাঁটাই প্রস্তাব তোলেন।
এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়- এ দুটি মঞ্জুরির দাবিতে আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে এই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়। ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, রুস্তম আলী ফরাজী, রওশন আরা মান্নান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, পীর ফজলুর রহমান, গণফোরামের মোক্কাবির খান ও স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।
২৫ জুন সংসদে অর্থ বিল, ২০২৩ পাসের মাধ্যমে বাজেটের আর্থিক ও কর প্রস্তাব সংক্রান্ত বিধি-বিধান অনুমোদন করা হয়। সোমবার নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০২৩ পাসের মাধ্যমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস হয় যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
এবারের বাজেটের মূল দর্শন হলো ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। যুদ্ধ ও মহামারি আক্রান্ত অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন, নির্বাচনী বছরের চাপ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, বাজেট ঘাটতির অর্থায়ন, উন্নয়ন কর্মসূচি চলমান রাখাসহ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার মতো নানামুখী চাপের মধ্যে এই বাজেট করা হলো।
এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। তা সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৩
এসকে/জেডএ/আরএইচ