ঢাকা: ‘বৈষম্য রোধে বাজেট’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা বাজেটে নারীর প্রতি বৈষম্য কমানোর আহবান জানিয়ে বলেছেন, প্রান্তিক নারীদের বাদ দিয়ে সর্বজনীন বাজেট করা সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার রাজধানীর স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে পাক্ষিক অনন্যা, দৈনিক ইত্তেফাক, ক্লিক ইত্তেফাক.কমের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনায় বক্তারা একথা বলেন।
পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনায় মূল বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম দুর্নীতির প্রভাব বাজেটে পড়ছে।
নারীনেত্রী সালমা ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে নারীর অধিকার ও বাজেট নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু নারীর প্রতি বৈষম্য দূর হওয়ার মতো বাজেট হচ্ছে না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ-হারে উল্লম্ফন প্রয়োজন। সেজন্য শুধু বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নয়ন দরকার বলে হতাশভাবে অপেক্ষা করা যায় না। সব এলাকাতে স্থানীয় সম্ভাবনাগুলোকে সর্বোচ্চ সদ্ব্যব্যবহার করতে হবে। এরকম বিনিয়োগ ছাড়া বৈষম্য ও দারিদ্র হ্রাস করা সম্ভব হবে না।
রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধি ও বেসরকারি বিনিয়োগ হারে স্থবিরতার পর এবারের বাজেটে প্রয়োজন ছিল উদ্যমী, ব্যতিক্রমী ও মরিয়া ধাঁচের কৌশল। সেটি দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আয়-বৈষম্য বেশি। শিক্ষা, নারী-পুরুষ, শহর-গ্রাম ও অঞ্চল ভেদে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। এ বৈষম্য দূর করতে হবে।
বিআইডিএস গবেষণা পরিচালক কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রতি বছর সবমিলিয়ে ৫০ থেকে ৮০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান প্রয়োজন। বিনিয়োগ বাড়ালেই কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। অন্যান্য বছর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। এবার তা হয়নি। গত তিন বছর ধরে ক্ষুদ্র শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। এ বিষয়ে প্রতি বছরই এসএমই রিফাইন্যান্সিং এর কথা বলা হয়, এবারেও তাই করা হয়েছে। নতুন কিছু নেই।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এসএমই ঋণের ১৫ শতাংশ নারীকে দেওয়ার কথা। কিন্তু নারীদের ওই কোটা পূরণ হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নারী উদ্যোক্তার অভাবেই এই কোটা পূরণ করা যাচ্ছে না। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিফলন সাধারণ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে না।
ব্যারিস্টার রুহিন ফারহানা বলেন, পানির দাম বাড়ছে, বাইসাইকেল, ট্রেন-সেবার দাম বাড়ছে। বাজেট যদি দরিদ্রবান্ধবই হবে তাহলে এসব পণ্য ও সেবার দাম কেন বাড়ছে?
উদ্যোক্তা হাবিবা মাহমুদ বলেন, বাজেটে উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু করা উচিত। কারণ উদ্যোক্তারা মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, এই বাজেট আরো উচ্চাভিলাষী হওয়া উচিত ছিল। বাংলাদেশ এখন ধনী দেশ। জনসংখ্যা ১৬ কোটি। সব খাতে খরচ বাড়ছে। তাই বাজেট ছোট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ড. শামসুল আলম বলেন, এই বাজেট দরিদ্রমুখী। রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতির জন্য কোনো সমস্যা নয়। হরতাল-অবরোধের পরেও বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি ১৪ শতাংশের বেশি হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। এটি একটি বড় শঙ্কার জায়গা। বেসরকারি বিনিয়োগ দ্রুত কমে যাচ্ছে। আগামীতে ৭ এর ওপরে প্রবৃদ্ধি নিতে হলে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এজন্য আগামী বছর ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে তেল আমদানির ট্যারিফ-মূল্য বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে ভর্তুকি কমানো হয়েছে। এতে করে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়বে। তাই আজ যে ব্যক্তি বিনিয়োগ করবেন তাকে এ বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৪
** আরো উচ্চাভিলাষী বাজেট দরকার ছিল
** বিনিয়োগে উল্লম্ফন ছাড়া বৈষম্য দূর হবে না
** ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় শঙ্কা বাড়ছে