ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

শিক্ষায় বাজেট বেড়েছে, প্রতি জেলায় শিখনকেন্দ্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৮
শিক্ষায় বাজেট বেড়েছে, প্রতি জেলায় শিখনকেন্দ্র

ঢাকা: সবার জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের বিপরীতে মোট ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৃহস্পতিবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি ঘোষণা দিয়ে জানান, এটি হচ্ছে কোনো খাতে আগামী বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ।
 
এরমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২২ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ২৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা।

 
 
২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রাথমিকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২২ হাজার ২৩ কোটি ২৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় মোট ২৩ হাজার ১৪৭ কোটি ৯৫ হাজার টাকা বাজেট বরাদ্দ ছিলো। এবার বেড়েছে ২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা।  
 
চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় এবারের বাজেটে চমকের মধ্যে ৬৪টি জেলায় ৬৪টি জীবিকায়ন ও জীবনব্যাপী শিখনকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ও মানবসম্পদের উন্নয়নে ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে।  
 
মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা 
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার প্রসারে আমরা ইতোমধ্যে অনেকটা অগ্রসর হয়েছি। এখন আমরা মনোযোগ দিতে চাই জীবনমানে মৌলিক পরিবর্তন আনার উপযোগী শিক্ষা এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার উন্নত পরিবেশের দিকে। আমরা মনে করি জীবনের শুরুতে একটি শিশু যদি ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক পরিচ্ছন্নতা, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ, কর্মনৈপুণ্য ও পারস্পরিক সহমর্মিতার বোধ নিয়ে বেড়ে উঠে সে শিশু হয়ে উঠতে পারে উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের রূপকার। শিশুদের উপযোগী করে এসব মৌলিক শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের উন্নয়ন প্রয়োজন।
 
তিনি বলেন, বর্ধিত চাহিদার নিরিখে আমরা আমাদের চলমান কার্যক্রম-যেমন উপবৃত্তি, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম ইত্যাদির পরিধি বাড়াবো। পাশাপাশি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক ওয়াশব্লকসহ ৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, ৬৫ হাজার শ্রেণিকক্ষ, ১০ হাজার ৫শ’ শিক্ষক কক্ষ, ৫ হাজার বিদ্যালয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ও ৩০ হাজার খেলার সামগ্রী বিতরণ করা হবে। আগের ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় আরও ১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সব ইউনিয়ন ও কয়েকটি শহরে আইসিটি নির্ভর কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। ৬৪টি জেলায় ৬৪টি জীবিকায়ন ও জীবনব্যাপী শিখনকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। আমরা শিক্ষকদের জন্য চলমান প্রশিক্ষণের বাইরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ এবং ছাত্রদের জন্য গণিত অলিম্পিয়াডের কৌশল প্রয়োগ করে গণিত ভীতি দূর করার উদ্যোগ নিয়েছি।
 
মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষা
অর্থমন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে মেধা-মূল্যায়ন, শিক্ষা কার্যক্রমে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ প্রসার এবং শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের বিষয়টি বর্তমানে প্রাধান্য পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও পেতে থাকবে। ‘সরকারি কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২শ’ সরকারি কলেজে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী ও ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ৩২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের আওতায় মাল্টিমিডিয়াসহ শ্রেণিকক্ষ, ল্যাংগুয়েজ-কাম-আইসিটি ল্যাব, হোস্টেল নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় আসবাব ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হবে। মহাবিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ ২৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৬ হাজার ৩৪০টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ এবং ২ হাজার ১২০টি স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বল্প সময়-ব্যয়-যাতায়াতের মাধ্যমে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানের জন্য ২৩টি উদ্ভাবনমূলক ধারণার পাইলটিং করা হচ্ছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে সব বোর্ডের সমন্বিত উদ্যোগে প্রশ্নব্যাংক তৈরির চেষ্টা করছি।
 
কর্মসংস্থানবান্ধব কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা
দেশে প্রতি বছর আনুমানিক ২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, শ্রমবাজারে আসা সব কর্মী দক্ষ নয়। ফলে দেশে বিপুল শ্রমশক্তি থাকা সত্ত্বেও দেশিয় শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের জন্য আমাদের প্রতিবেশী দেশের কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। অন্যদিকে, দক্ষতার ঘাটতির কারণে প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মীরা যথাযথ মজুরি পায় না। অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যানুপাতে বাংলাদেশে প্রবাস আয় প্রবাহ তুলনামূলকভাবে কম। বস্তুত, আধুনিক ও বস্তুনিষ্ঠ মাদ্রাসা শিক্ষাও দীর্ঘমেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যসহ আরব দেশগুলোতে মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। এসব দিকে লক্ষ্য রেখে কর্মসংস্থানবান্ধব কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো, এ ধরনের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
 
তিনি বলেন, সারাদেশে ১শ’ উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ এবং অবশিষ্ট ৩৮৯টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিদ্যমান প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণের আয়োজন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে জনপ্রিয় করা হচ্ছে।  
 
এছাড়া চারটি বিভাগীয় শহরে চারটি নারী পলিটেকনিক, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে গার্লস টেকনিক্যাল স্কুল, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং সব বিভাগে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে ৩৫টি মডেল মাদ্রাসা স্থাপন ও ৫২টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করেছি এবং দেশের ৬৫৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৮
এমআইএইচ/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।