বৃহস্পতিবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এবছর জাতীয় বাজেটে নির্বাচিত ১৫ মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে শিশু কেন্দ্রিক বাজেট রাখা হয়েছে এক হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, আজকের শিশুরাই হবে আমাদের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্নের রূপকার। তাই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী পরিবেশ সৃজনে আমরা নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। আমাদের বাস্তবায়িত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে আছে- শিশু বিকাশ কেন্দ্র পরিচালনা, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সুরক্ষা ও শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ, কর্মজীবীর সন্তানদের জন্য দিবা যত্ন কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি।
‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নে ড্রপ-ইন সেন্টার, জরুরি রাত্রিকালীন আশ্রয়, শিশুবান্ধব অঞ্চল, ওপেন এয়ার স্কুল, শুল্কবিহীন শিশু হেল্পলাইন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের জন্য ১৮ মাসব্যাপী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও ৬ মাস মেয়াদি দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৯০ হাজার শিশু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। চলতি বছরে আরও ৬০ হাজার শিশুকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, মালিক, শ্রমিক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা মোট ৩৮টি কাজকে শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে আমরা শিশু বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে শিশু উন্নয়নকে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেটের মূলধারায় নিয়ে এসেছি। শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেটের পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ানো হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য- ২০২০ সাল নাগাদ শিশুকেন্দ্রিক বাজেট বরাদ্দ মোট বাজেটের ২০ শতাংশে উন্নীত করা।
অর্থমন্ত্রী জানান, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা জেলায় অনগ্রসর শিশুদের জন্য ২ হাজার ১০৯টি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ২০ টি ডে-কেয়ার সেন্টার, ৫১৫ টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং ৭৪০টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
‘২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে শিশু বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে, যা থেকে জাতীয় বাজেটে শিশুদের উন্নয়নে বরাদ্দ, গৃহীত কার্যক্রম ও নীতিকৌশল বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরের জন্য শিশু বাজেটের পরিধি সম্প্রসারণ করে আরও ১৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিশুদের কল্যাণে বরাদ্দকৃত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ ও শিশু খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, জনমুখী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের প্রভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাতৃমৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৬ জনে (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) নেমে এসেছে। ২০০৯ সালে এ হার ছিল ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বর্তমানে একবছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে পূর্ণ টিকা গ্রহণের হার ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ, ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর হার ৯২ শতাংশ।
‘টিকাদান কর্মসূচির ব্যাপ্তির ফলে কমে এসেছে শিশুমৃত্যুর হার। বর্তমানে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে জীবিত জন্মে ২৮ জন, যা ২০০৯ সালে ছিল ৩৯ জনে,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৮
এইচএমএস/এমএ