বৃহস্পতিবার (০৭ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
তিনি জানান, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গঠন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার হবে আমাদের কৌশল।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে নতুন বাজেট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানার মাধ্যমে সার, চিনি, কাগজ উৎপাদন, মোটরযান সংযোজন, ক্ষুদ্র-মাঝারি-কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও উৎপাদিত পণ্যের মান সুরক্ষা ও মেধাসম্পদ সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি, দেশের বিভিন্ন জেলায় ও অঞ্চলে বিসিক এবং অন্যান্য শিল্পপার্ক ও শিল্প নগরী স্থাপন, সার সংরক্ষণ-বিতরণ সুবিধার জন্য বাফার গুদাম নির্মাণ, জাহাজভাঙ্গা শিল্প স্থাপন এবং শিপইয়ার্ড নির্মাণ; বন্ধঘোষিত কলকারখানা পুনরায় চালুকরণ; পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। Better Work and Standards Programme (BEST) এর মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত পণ্য, শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এবং গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত যেমন, নারী উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক শিল্প, কৃষিভিত্তিক শিল্প, নতুন উদ্যোক্তা ও উৎপাদনশীল খাতে স্বল্প খরচে ব্যাংক ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু রাখা হয়েছে। শিল্পজাত পণ্যের মান-নিয়ন্ত্রণ সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে বিএসটিআই-তে পূর্ণাঙ্গ ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে এবং এর কার্যক্রম জেলাপর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
শিল্পখাতে উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কে মুহিত বলেন, জিডিপি ও কর্মসংস্থানে শিল্পখাতের অবদান শক্তিশালী হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হয় এবং ঝুঁকির আশঙ্কা কম থাকে। আমরা জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান বর্তমান ৩০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোও আমাদের লক্ষ্য। তবে, শিল্পখাতের বিকাশে আমরা আমাদের নিজস্ব বাস্তবতাকে বিবেচনায় রাখবো। বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, অপরিণত মূলধন বাজার সব মিলিয়ে আমাদের জন্য শ্রমঘন-স্বল্পপুঁজিনির্ভর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার অধিক উপযোগী হবে বলে মনে করি। এ প্রক্রিয়া দারিদ্র্য বিমোচন ও অসমতা হ্রাসের ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
নতুন বাজেটে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, যুগের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে তরুণদের নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উদ্ভাবিত সামগ্রী ব্র্যান্ডিং ও বাণিজ্যিকীকরণ, মেধাস্বত্ত্ব সংরক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে আমরা ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। উদ্ভাবনভিত্তিক ব্যক্তি উদ্যোগের বিকাশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলা ও কর্মসংস্থানে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, শিল্পখাত সম্প্রসারণে স্বল্প-পুঁজিনির্ভর-শ্রমঘন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রসার আমাদের জন্য বিশেষ উপযোগী হবে। পাশাপাশি, শিল্পখাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হবে আমাদের উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গঠন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার হবে আমাদের কৌশল।
দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম পল্লি সমাজসেবা কার্যক্রম শুরু করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে পল্লি সমাজসেবা কার্যক্রম, পল্লি মাতৃকেন্দ্র কার্যক্রম, দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম ও শহর সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় পরিবার প্রতি ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা হারে গ্রামের অতি-দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/প্রতিষ্ঠান বিভিন্নমুখী ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার ফলে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৮
এইচএমএস/এসএইচ