আজকের দিনে স্মার্টফোন ব্যবহার করা হচ্ছে, একটি মিনি কম্পিউটার হিসেবে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার কম্পিউটারকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে।
আজকাল স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন, শিক্ষা ব্যবস্থা, কৃষি উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাহা সরকারের অন্যতম মূল লক্ষ্য।
এক জরিপে দেখা গেছে, অপারেটরের কাছ থেকে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আইফোন ব্যবহার করছে ২৫ লাখেরও বেশি। কিন্তু বিটিআরসির তথ্য নিয়ে আইফোন পরিবেশকদের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তারা জানান, বিগত ৫ বছরে বৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার। একই চিত্র শাওমি, হুয়াওয়ে, নকিয়া, অপ্পোসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, উচ্চমাত্রার শুল্কের কারণে স্মার্টফোন বাজারে গেজেট ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হচ্ছে। অতিস্বল্প ব্যয়ে একজন গেজেট ব্যবসায়ী যেখানে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একটি স্মার্টফোন বাজারজাত করছে, সেখানে অন্যসব বৈধ স্মার্টফোন আমদানিকারকরা ব্যবসা পরিচালনা করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। এতে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া উচ্চমাত্রার শুল্কের ফলে স্মার্টফোন সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কপি স্মার্টফোন ও নকল ফোনে বাজার সয়লাব করে ফেলছে, যা পৃথিবীর কোথাও নেই।
এক জরিপে দেখা গেছে, সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি ভ্যাট ও শুল্ক আদায়ের ওপর নির্ভরশীল। যেখানে কোনো কলকারখানা নেই, সেখানে বিনা শুল্কে স্মার্টফোন আমদানি হয়। কারণ সরকার ব্যবহারকারীর কাছ থেকে কলচার্জ বাবদ প্রতিদিন প্রতিঘণ্টায় রাজস্ব অর্জন করছে। মোট কথা সিঙ্গাপুর সরকার স্মার্টফোনকে ব্যবহার করছে রাজস্ব আয়ের মাধ্যম হিসেবে। অর্থাৎ স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রায় শুল্ক নির্ধারণের মাধ্যমে আমদানি সহজকরণ হলে বাংলাদেশ সরকারও সিঙ্গাপুরের মতো রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন তথা স্মার্টফোন শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর। এদেশে স্মার্টফোনের কারখানা স্থাপিত হলে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতি অধিক সমৃদ্ধ হবে, সেইসঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে। যদিও মুষ্ঠিমেয় উৎপাদনকারীরা প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হবেন। কিন্তু এতে সরকার রাজস্ব আদায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কারখানা স্থাপনে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড যেমন হুয়াওয়ে, শাওমি, অপ্পো, ভিভো, নকিয়া, মোটোরোলা ইত্যাদি ব্র্যান্ডের অন্তত আরো দুই বছর সময়ের প্রয়োজন। এ অন্তর্বর্তীকালীন সহজ শুল্ককরণের মাধ্যমে বর্তমান ব্যবসাকে সচল রাখতে হবে যাতে এসব ব্র্যান্ড আমদানির মাধ্যমে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অর্জন করতে পারবে।
সরকার প্রথম তিন মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে যদি ৫-১০ শতাংশ শুল্ককরণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে এবং পরবর্তী তিন মাস প্রস্তাবিত উচ্চ শুল্ককরণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে তাহলে বড় ধরনের পার্থক্য নির্ণয় করতে সক্ষম হবে। যেমন, একসময়ে ফ্লাট রেট শুল্ককরণের মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৯
আরবি/এসএইচ