জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট বক্তব্য শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।
মহামারি করোনা ভাইরাস সংকটময় পরিস্থিতি এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তায় রেখে এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
বয়স্ক ভাতার আওতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির কারণে সর্বাধিক দারিদ্র প্রবণ ১০০টি উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সব দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে ৫ লাখ জন নতুন উপকার ভোগী যোগ হবে। এ খাতে ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান করা হবে।
বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার আওতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনা মহামারির কারণে সর্বাধিক দারিদ্র প্রবণ ১০০টি উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে ৩ লাখ ৫০ হাজার জন নতুন উপকারভোগী যোগ হবে। এ খাতে ২১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান করা হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ জরিপ অনুযায়ী ২ লাখ ৫৫ হাজার জন নতুন ভাতাভোগী যুক্ত করে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর সংখ্যা ১৮ লাখ জনে বৃদ্ধি করা হবে। এ বাবদ ২২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হবে।
এছাড়া দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, ভিজিডি কার্যক্রম, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভাতা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ, ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের সহায়তা, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি ইত্যাদি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
‘পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম’ এ ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচনের কৌশল হিসেবে তৎকালীন ১৯টি থানায় ‘পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম’ শুরু করেন। এ কার্যক্রমের সফলতার কারণে বর্তমানে দেশের সব জেলায় প্রত্যেক উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আশা করা যায় এ প্রণোদনার মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। করোনাজনিত আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করা এবং গ্রামে বসবাসরত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে পল্লী সমাজ সেবা কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদানের ঘোষণা করছি।
দেশের এক-চতর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র, ২০১৫-এর আলোকে করোনা পরিস্থিতি হতে দরিদ্র অসহায় মানুষের অবস্থা উত্তোরণের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। দরিদ্র জনগণের অবস্থা উন্নয়নে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রতিবছর বরাদ্দ বৃদ্ধি করে চলছি। বর্তমানে দেশের প্রায় এক- চতুর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২০
এমইউএম/আরবি/