করোনা সংকট কাটিয়ে দেশের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে ট্যুরিজম সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা যা ভাবছেন তা তুলে ধরা হলো বাংলানিউজের বিশেষ আয়োজনে:
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জাবেদ আহমেদ
‘শুধু যে কোভিড-১৯- এর কারণে পর্যটন সেক্টর সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়, এই সেক্টরের সমস্যা বহুদিনের। বর্তমানে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আগে থেকে পিছিয়ে থাকায় এখনো এই সেক্টরে বহু ঘাটতি রয়েছে।
‘পর্যটনখাতের উন্নয়নের জন্য গুচ্ছ পদক্ষেপের চেয়ে বেশি প্রয়োজন মাস্টার প্ল্যান বা সমন্বিত পরিকল্পনা। সরকার সে দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। দেশকে যথোপযুক্তভাবে ব্র্যান্ডিং করা এবং পর্যটনখাতে দক্ষ জনবল তৈরি করতে প্রশিক্ষণ প্রদান করাসহ বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে। ’
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান
‘আমাদের জাতীয় বাজেট পর্যটনবান্ধব নয়, আমরা চাই পর্যটনবান্ধব এবং কর্মপরিকল্পনাভিত্তিক সমন্বিত বাজেট। বিশেষ করে অ্যাভিয়েশন খাতে পর্যটনের বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় হয়। অন্যান্য খাত কোনো প্রাধান্য পায় না। সেসব খাতে বরাদ্দও যথেষ্ট নয়। ’ আভ্যন্তরীণ পর্যটন যেহেতু ব্যাপক সম্ভাবনাময় এবং বিগত বছরগুলোতে কয়েকগুন প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
ট্যুরিজম ডেভলপারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ হাবিব আলী
‘করোনার কারণে এই খাত ১১ হাজার কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এরমধ্যে অ্যাভিয়েশন সেক্টরে চার হাজার কোটি টাকা বাকি সাত হাজার কোটি টাকা অন্যান্য সেক্টরে। এই সাত হাজার কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির ধাক্কা সামাল দেওয়ার মতো অবস্থা ইন্ডাস্ট্রির নেই। তাই এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা জরুরি হয়ে পড়েছে। সঠিক সহযোগিতা না পেলে পর্যটনখাত ঠিক সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এই বার্তাটি সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ’
ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট খবির উদ্দীন আহমেদ
বাংলাদেশে ট্যুরিজমভিত্তিক রিসোর্টগুলো অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে এই সেক্টরের ব্যবসা শতভাগ বন্ধ থাকা সত্বেও তারা কর্মীদের বেতন-ভাতা চালু রেখেছেন। এটা তারা করছেন পুঁজি ভেঙে বা সম্পদ বিক্রি করে। তাই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। এজন্য অন্তত দু’বছরের জন্য ভ্যাট কমিয়ে চার শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। হোটেল ও রিসোর্টকে সরকার ঘোষিত নগদ প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে। রিসোর্টগুলো তাদের নিজস্ব জমিতে প্রচুর কৃষিপণ্য উৎপাদন করে থাকে এই বিবেচনায় তাদেরকে কম সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ’
বিডি ইনবাউন্ডের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইকরাম
‘আমাদের পর্যটনের উন্নয়ন হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই উন্নয়ন যথার্থ ও যুগোপযোগী নয়। বিশেষ করে ট্যুরিজম সাইটগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন দরকার। বর্তমান যেসব সাইট রয়েছে সেগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধন, অবকাঠামো ও বিনোদন উপাদান যেমনি প্রয়োজন তেমনি নতুন নতুন সাইট সংযোজন করতে হবে। একটি পরিকল্পনাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। ’
বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল
‘পৃথিবী এগিয়ে চলেছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্যটনেও আমাদের ইনোভেশন আনতে হবে। সরকার বিভিন্ন নীতির মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। ’
টোয়াবের ডিরেক্টর লিগ্যাল ম্যাটার্স মো. জালাল উদ্দীন টিপু
‘সব কিছু বন্ধ রাখার মাঝে আমরা সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেওয়া উচিত। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারবে না। ’
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল্লার রাব্বী
‘পর্যটন শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও পেশাজীবীদের প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে। পর্যটন খাতের সমস্যা ও কীভাবে সেগুলো থেকে নিজেদের উত্তরণ করা যায় তার জন্য পর্যটন গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২০
এসআইএস/এজে