সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বাধিক ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বাজেট ঘোষণা হয়েছে।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরের একটি অভিজাত কনভেনশন হলে সংবাদ সম্মেলন করে বাজেট ঘোষণা করেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
প্রস্তাবিত বাজেটে ১ হাজার ৪০ কোটি ২০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আয় ও সমপরিমাণ ভেতরে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
বাজেটে আয়ের খাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে হোল্ডিং ট্যাক্স ৪৫ কোটি দুই লাখ ২৮ হাজার টাকা।
এছাড়া বাজেটে সর্বাধিক ব্যয়ের খাত ধরা হয়েছে রাজস্ব খাতে ৯০ কোটি ৪২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
বাজেট ঘোষণাকালে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নগরবাসীর অধিকতর সুযোগ-সুবিধা ও সেবা দেওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ বাজেট ঘোষণা করা হলো।
বাজেটে উল্লেখযোগ্য আয়ের খাতগুলোর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স ৪৫ কোটি ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের কর ১৬ কোটি টাকা, ইমারত নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণে ২ কোটি, পেশা ব্যবসায় কর ৮ কোটি ৫০ লাখ, বিজ্ঞাপনে ১ কোটি ২০ লাখ, বিভিন্ন মার্কেটের দোকান গ্রহীতার নাম পরিবর্তনের ফি ও নবায়ন ফি বাবদ ৮০ লাখ, ঠিকাদারি তালিকাভুক্তি ও নবায়ন ফি বাবদ ৩০ লাখ, ল্যাব টেস্ট ফিস বাবদ ৬০ লাখ, বাস টার্মিনাল ইজারা বাবদ ১ কোটি ৭০ লাখ, ট্রাক টার্মিনাল ইজারা বাবদ ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, খেয়াঘাট ইজারা বাবদ ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি ও দোকান ভাড়া বাবদ ৪ কোটি ৫০ হাজার টাকা, রোড রোলার ভাড়া বাবদ আয় ৫০ লাখ টাকা, রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ বাবদ আয় ৩০ লাখ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে আয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, দক্ষিণ সুরমা শেখ হাসিনা শিশু পার্কের টিকিট বিক্রয় থেকে আয় ৮০ লাখ টাকা, পানির সংযোগ লাইনের মাসিক চার্জ বাবদ ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পানির লাইনের সংযোগ ও পুনঃসংযোগ ফি বাবদ ১ কোটি টাকা, নলকুপ স্থাপনের অনুমোদন ও নবায়ন ফি বাবদ ২ কোটি টাকা। এছাড়া নগরবাসী হোল্ডিং ট্যাক্স ও অন্যান্য বকেয়া পরিশোধ করলে ১০১ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হবে বলেও আশা করেন মেয়র।
বাজেটে রাজস্ব খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯০ কোটি ৪২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তন্মধ্যে সংস্থাপন খাতে ৩৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, শিক্ষাখাতে সাড়ে ৬ কোটি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুদান খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ, স্বাস্থ্য ও প্রয়ঃপ্রণালী খাতে ১৬ কোটি ৮২ লাখ ২৫ হাজার, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ খাতে ব্যয় ৫০ লাখ টাকা, বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ৪৫ কোটি টাকা, মোকদ্দমা ফি ও পরিচালনা ব্যয় বাবদ ৫০ লাখ টাকা, জাতীয় দিবস উদযাপনে ব্যয় ৭০ লাখ, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিতে ১৫ লাখ, মেয়র কাপ ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টনে ব্যয় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, রিলিফ ও জরুরি ত্রাণ ব্যয় ২ কোটি, আকস্মিক দুর্যোগ/বিপর্যয়/করোনা ব্যয়ে বরাদ্দ ২ কোটি, রাস্তার বৈদ্যুতিক বাতির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ৩ কোটি, কার্যালয় ভাড়া বাবদ ১ কোটি, নিরাপত্তা ও সিকিউরিটি পুলিশিং ব্যয় বাবদ ৯০ লাখ, ডিজিটাল মেলার আয়োজন বাবদ ব্যয় ২০ লাখ, অন্যান্য খাতে ব্যয় ১৫ লাখ, পানি সরবরাহ শাখার সংস্থাপন ব্যয়সহ পানির লাইনের সংযোগ ব্যয়, পাম্প হাউজ, মেশিন, পাইপ লাইন মেরামত ও সংস্কারসহ সর্বমোট ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ ব্যয় ধরা হয়েছে।
বাজেটে রাজস্বখাতে অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ মোট ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তন্মধ্যে রাস্তা নির্মাণ/মেরামত/সংস্কার, ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ/মেরামত/সংস্কার, ড্রেন নির্মাণ/মেরামত, সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি ও সম্পদ ক্রয়, সিটি করপোরেশনের ভবন নির্মাণ/মেরামত, সিসিকের নিজস্ব স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ ও সংস্কার, ঢাকায় সিটি করপোরেশনের নিজস্ব লিয়াজো অফিসের জন্য ফ্ল্যাট ক্রয়, কসাই খানা নির্মাণ/ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা উন্নয়ন, সিটি করপোরেশনের যানবাহন রক্ষায় গ্যারেজ নির্মাণ, সিটি করপোরেশনের যানবাহন। রক্ষণাবেক্ষণে ওয়ার্কশপ নির্মাণ, হাট বাজার উন্নয়ন, বাস টার্মিনাল সংস্কার ও উন্নয়ন, সিসিক এলাকায় পাঠাগার নির্মাণ, নাগরিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন, এমজিএসপি প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের নিজস্ব অর্থ ব্যয়, সিসিকের জন্য জিপ গাড়ি ও ২টি আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় এবং নারীদের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ ব্যয়সহ ইত্যাদি ব্যয় উল্লেখযোগ্য।
বাজেটে ব্যয়ের খাত দেখানো হয়েছে- সরকারি উন্নয়ন সহায়তা থেকে বরাদ্দ খাতে ব্যয় ৫ কোটি টাকা, কোভিড-১৯ মোকাবিলা, ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার উপ-খাতসহ সরকারি বিশেষ মঞ্জুরি খাতে ৪৬ কোটি টাকা, জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে ৪৮০ কোটি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নে ও আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সরবরাহ প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা, নগর ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ খাতে ২০ কোটি, দক্ষিণ সুরমা এলাকায় শেখ হাসিনা শিশু পার্কে অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাইড স্থাপনে ২ কোটি, যানজট নিরসন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে ৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন ছড়া খনন ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ খাতে ১০ কোটি, সিসিকে এসফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে জমি অধিগ্রহণে ২০ কোটি টাকা, সিসিকের নিজস্ব ফিলিং স্টেশন স্থাপনে ৫ কোটি টাকা, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপনে ৫ কোটি, কুমারপাড়ায় নগর মাতৃসদন ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনে ৫ কোটি, তোপখানাস্থ সিসিকের নিজস্ব ভূমিতে আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে ৫ কোটি, উৎপাদন নলকূপ স্থাপনে ৫ কোটি, মীরের ময়দানে স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে ১ কোটি, যানজট নিরসনে ৪টি পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণে ৪ কোটি, ৪টি গরুর হাট নির্মাণে ৪ কোটি, ৪টি জবাইখানা নির্মাণে ৪ কোটি, ৪টি খেলার মাঠ নির্মাণে ৪ কোটি, বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে ৫ কোটি, ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের স্থায়ী অফিস নির্মাণে ১০ কোটি, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মাজার, কবরস্থান, শশ্মানঘাট, ঈদগাহ উন্নয়নে ১০ কোটি, ইউনিসেফের অর্থায়নে সিসিক এলাকায় সুবিধা বঞ্চিত মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা এবং টিকাদান কর্মসূচি খাতে ২ কোটি টাকা, সুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যানের ফিজিবিলিটি স্টাডি করণে প্রকল্প ৫ কোটি, ৫০ এমএলডি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য ১৩ দশমিক ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ ৫ কোটি, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্প খাতে ৫০ লাখ, বস্তিসমূহের উন্নয়ন প্রকল্পে ২ কোটি এবং সিসিকের নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প খাতে মার্কেট নির্মাণ বাবদ প্রাপ্ত সালামি ও আবাসিক প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় গ্রহণ বাবদ মোট ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
বাজেট অধিবেশন উপস্থাপনা করেন সিসিকের অর্থ ও সংস্থাপন কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ। শুরুতে পবিত্র কোরআন শরীফ, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২, আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা
এনইউ/কেএআর/আরবি