ঢাকা: অনেকেই বিষয়টি হাল্কাভাবে নেয়। ভাবেন গ্র্যাজুয়েশন পাস করার পর যেভাবেই হোক একটা চাকরি হয়ে যাবে।
এক জরিপে দেখা গেছে, আমাদের দেশে শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত সব মিলিয়ে মোট বেকার আছে প্রায় ৪০ লাখের মতো। যে পরিমাণ বেকারের হার সে পরিমাণ জব সেক্টর বা শূন্য পদ তৈরি হয় না প্রতি বছর। যার কারণে একটা নেতিবাচক প্রভাব পরে চাকরির বাজারে। বিশেষ করে যারা প্রতি বছর ফ্রেস গ্র্যাজুয়েট হিসেবে পাস করে বের হয় তারা এ ধাক্কাটা বেশি খায়। কারণ এ সময়টাতে তারা আইডেন্টেটি ক্রাইসিসে ভোগে। নিজেকে তখন সমাজের বোঝা মনে হয়।
আমার মনে হয় প্রতিটি জব সিকারের উচিত ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়া নিয়ে কাউন্সেলিং করা বা প্রাথমিক পরামর্শ নেওয়া। সেটা হতে পারে কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে, যার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভালো/ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই বা বোন, যারা ইতোমধ্যে ভালো জায়গায় জব করছেন/কোনো নিকট আত্নীয় যিনি ভালো কোনো পজিশনে জব করেন। তাহলে কমপক্ষে সে বুঝতে পারবে যেদিকে ক্যারিয়ার ফোকাস করতে আগ্রহী, সেটার ভবিষ্যৎ কত দূর।
চলুন আজকে এ বিষয়ে কিছু ক্যারিয়ার টিপস দেওয়া যাক
১. লক্ষ্য নির্ধারণ
প্রথমেই আপনি আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন সরকারি নাকি বেসরকারি জব সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী। অথবা বেসরকারি জবের পাশাপাশি সরকারি জবের জন্য প্রস্তুতি নিতে চাচ্ছেন। অর্থাৎ যে পথেই হাঁটেন না কেন লক্ষ্য নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
২. প্রাথমিক প্রস্তুতি
আপনি যদি সরকারি জব পছন্দ করেন তাহল যে কোসো একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে নেওয়া উচিত। এতে করে আপনার একটি ভালো প্রস্তুতি হবে এবং আপনি খুব ভালভাবে বুঝে যাবেন কীভাবে আরও ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
অন্যদিকে বেসরকারি জবের প্রস্তুতিতে জব সিকারদের মধ্যে দারুন একটা উদাসিনতা লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই মনে করে প্রস্তুতির আবার কী আছে। কোনো সিলেবাস নেই বা নির্ধারিত কোনো দিকনির্দেশনাও নেই যেটা অনুসরণ করা যেতে পারে। যার কারণে দেখা যায়, ফ্রেস জব সিকাররা ইন্টারভিউতে খুব দ্রুত বাতিলের তালিকায় চলে যায়।
এটা ঠিক যে, কোনো সিলেবাস নেই কোম্পানিও জানে সেটা। তবে অবশ্যই প্রস্তুতির অনেক কিছু আছে এখানে। যেমন-
ক. সফট স্কিল
সফট স্কিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটা সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করে। বিভিন্ন ধরনের সফট স্কিল আছে। যেমন- Communication, Teamwork, Problem-solving, Time management, Critical thinking, Stress management, Adaptability, Negotiation, Leadership, Interpersonal, Analytical thinking, Public Speaking, Respectfulness এছাড়া আরও অনেক আছে।
তাই ব্যক্তিগতভাবে বা প্রশিক্ষণ নিয়ে এ স্কিলগুলো নিজের মধ্যে যুক্ত করে ফেলা উচিত, যা অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করতে সাহায্য করবে। বর্তমানে আমাদের দেশে ভালো মানের বেশ কয়েকজন সফট স্কিল ট্রেইনার আছেন যারা দেশ ও দেশের বাইরে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।
খ. প্রশ্ন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা
কী ধরনের প্রশ্ন হতে পারে সেগুলো নিয়ে ধারণা রাখা। তাহলে যে কোনোভাবেই প্রশ্ন করা হোক, পরিচিত প্রশ্ন মনে হবে এবং আপনি যে কোনো একটি উত্তর গুছিয়ে দিতে পারবেন। ইন্টারভিউ বোর্ডে কোনো একটি প্রশ্ন বুঝতে যদি ৩-৫ সেকেন্ডও দেরি হয় তাহলে সেটারও একটা নেতিবাচক প্রভাব পরে।
সাধারণত যে বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন সেটার ওপর কিছু প্রশ্ন থাকবে। এছাড়া আপনি যে পদের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন সে জগত নিয়ে সমসাময়িক প্রশ্ন করবে। পাশাপাশি কোম্পানি যে ধরনের বিজনেস করছে, তাদের প্রতিযোগী কারা (দেশ ও দেশের বাইরে), এ ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। অনেকে এটাও পছন্দ করেন যে, তার কোম্পানির মালিক পর্যায়ে যারা আছেন তাদের ক্যান্ডিডেট চিনে কিনা। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে Company Website থেকে About Us এবং Company Organogram দেখে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে নেওয়া কোম্পানি সম্পর্কে।
গ. টেকনিক্যাল স্কিলস
অনেক সময় দেখা যায়, শুধুমাত্র টেকনিক্যাল স্কিলসে ভালো জ্ঞান থাকার কারণে কোম্পানি শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে থাকেন।
তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু স্কিল অবশ্যই শিখে ফেলা উচিত। যেমন- Microsoft Office, Advanced level of Microsoft Excel, Microsoft Power BI, Microsoft PowerPoint, Digital Marketing, Graphics Design, Video Editing, HRIS, KPI, Chat GPT।
ঘ. আলাদা পোশাক প্রস্তুত রাখা
বর্তমান প্রেক্ষাপটে পোশাক খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাই ইন্টারভিউর জন্য সব সময় আলাদা পোশাক নির্ধারণ করে রাখবেন। সব সময় ভালোমানের পোশাক পরে ইন্টারভিউ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার ভেতরে বাড়তি আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে।
ঙ. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট গুছিয়ে রাখা
সব সময় ইন্টারভিউর প্রাথমিক ডকুমেন্ট (যেমন- রেজুমে/ সিভি, কালো কালির কলম, প্রশিক্ষণের মূল সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ/ফটোকপি সনদ) প্রস্তুত রাখা উচিত। বিশেষ করে রেজুমে/সিভি সুন্দরভাবে প্রস্তুত করে রাখা। যদি পেশাদার রেজুমে/সিভি রাইটার দিয়ে প্রস্তুত করিয়ে নিতে পারেন তাহলে সেটাতে ভুলের পরিমাণ কম থাকবে। মনে রাখবেন প্রতিবার আবেদনের সময় কাভার লেটার অবশ্যই ব্যবহার করবেন। অনেক সময় নির্ভুল ও সৃজনশীল কাভার লেটারের কারণে নিয়োগ কর্তার ভালো মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।
চ. নিয়মিত একজন ক্যারিয়ার ম্যান্টোরের অধীনে থাকা
সব সময় একজন ম্যান্টোরের অধীনে থাকা উত্তম। তাহলে ছোট খাট ভুলগুলো দ্রুত শুধরে নিতে পারবেন।
ছ. রেফারেন্স ছাড়া জব হয় না এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসা
এটা একটি প্রচলিত বাক্য, যা জব সিকারদের মধ্যে ভালো চর্চা হয়। হ্যাঁ এটা সত্যি কিছু ক্ষেত্রে রেফারেন্স জব পেতে ভালো ভূমিকা রাখে। তবে সব সময় মনে রাখতে হবে নিজের মেধায় ও যোগ্যতায় জব পাওয়ার মধ্যে আলাদা একটা আত্মতৃপ্তি কাজ করে।
জ. নিয়োগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
চূড়ান্ত নিয়োগ অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। তবে একটা কথা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে যাকেই চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, সেটার নীতিগত স্বাধীনতা অবশ্যই তাদের আছে। কিন্তু আপনাকে ইন্টারভিউতে যা প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং যে স্কিলগুলো টেস্ট নিয়েছিল সেগুলোর উত্তর আপনি সঠিক দিয়েছিলেন কিনা। যদি সঠিক দিয়ে থাকেন তাহলে আপনি সঠিক পথে আছেন বুঝে নিতে হবে এবং পরবর্তী ইন্টারভিউর জন্য আরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এই আত্মবিশ্বাসটি কাজে লাগাতে হবে।
আবু জাফর
প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ভ্যাকেন্সি এনাউন্সমেন্ট ইন বিডি
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
আরবি