প্রথম পর্বে আমরা সাক্ষাতকার বা ইন্টারভিউয়ের চল্লিশটি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছি। এ পর্বে থাকছে প্রথম কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কৌশল।
নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?
আপনি যদি ফ্রেশার হন তবে এই প্রশ্নের উত্তরেই আপনাকে অনেকখানি মূল্যায়ন করা হয়ে যেতে পারে। আর যদি অভিজ্ঞদের দলভুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পাওয়া যায়।
মূলত কি চায় এই প্রশ্নের মাধ্যমে? তা হলো- আপনি নিজেকে কতটা চিনেন, কতটা ভালোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন, কতটা স্মার্টভাবে বলতে পারেন, কিভাবে বলতে পারেন, বলার কলাকৌশল কেমন, কি বলছেন, নিজেকে কতটা পজেটিভ বা নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করছেন, কতটা বেশি বা কম বলছেন, ইন্ট্রোভার্ট নাকি এক্সট্রোভার্ট এমন অনেক কিছুরই মূল্যায়ন করা হয়। তবে মনে রাখবেন, এই প্রশ্নের উত্তর যেন পরীক্ষার মুখস্থ দশ নম্বরের উত্তর না হয়ে যায়। সুন্দর ও সাবলিল উত্তরের জন্য নিজেকে জানুন, এক্সপার্টের সহায়তা নিন কিংবা ইন্টারনেটের সহায়তা নিন। আপনাকে সহায়তার জন্য অসংখ্য এক্সপার্ট সেখানে বসে আছেন।
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বলুন?
এই প্রশ্নের উত্তরে সাধারণত জানতে চাওয়া হয়, আপনি কতটা পুঁথিগত বিদ্যায় ডুবে ছিলেন আর কতটা সত্যিকারের জ্ঞান লাভ করার চেষ্টায় ছিলেন। কিংবা কতটা পড়েছিলেন এবং কি পড়েছিলেন। আপনার পড়াশুনার টপিক কর্মক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হবে, তাই এখানে মেলানোর চেষ্টা করা হয়।
এই প্রশ্নের উত্তরে যে পজিশনের জন্য ইন্টারভিয়ারের সামনে বসে আছেন তার সাথে সঙ্গতি রেখে টপিক, সাবজেক্ট বা বই অথবা অন্য কিছু যদি থাকে তাকে হাইলাইট করে কথা বলুন।
আপনার নিজের স্ট্রেন্থ/ উইকনেসগুলি কি কি বলে মনে করেন?
আপনাকে নিয়োগের মাধ্যমে আপনার কি কি গুণ কোম্পানির উপকারে বা স্বার্থে আসবে আর কি কি গুণ কোম্পানিকে বিপদে ফেলে দিবে তা যাচাই করার জন্যই এ প্রশ্ন করা হয়।
উত্তর দেয়ার সময় স্মার্ট হওয়াই ভালো। নিজের এমন কিছু ভালো গুণ বলুন যা এই কাজের জন্য ভালো। আর এমন কিছু খারাপের কথাও বলুন যা আসলে ভালো বা এমন কিছু বলুন যা কর্মক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব তৈরি করবে না। আবার আপনি দুর্বলতাকে কিভাবে রিকভারের চেষ্টা করছেন এবং সফল হবার পথে আছেন বা সফল হয়ে তাকে ত্যাগ করেছেন তাও উপস্থাপন করুন। তাতে করে সাপ লাঠি দুই-ই বেঁচে যাবে।
আপনাকে আমাদের কেন নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই চাকরির বাজারে আপনি নিজেকে কতটা ভালোভাবে বিক্রয় করতে পারেন- এখানে তাই দেখা হয়। উত্তরে আপনি কোম্পানির জন্য কতটা গুরুত্ব বহন করতে পারবেন, কতটা গতি এনে দিতে পারবেন, কতটা পরিবর্তনের অংশীদার আপনি হবেন আর কতটা নেতৃত্ব দিবেন তার উল্লেখ্য করুন। যে জায়গার জন্য আপনাকে ভাবা হচ্ছে তার কতটা আপনি বুঝে নিতে পেরেছেন বা পারবেন বিষয়গুলোকেই পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করুন।
আমাদের কোম্পানিতেই কেন কাজ করতে চান?
যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউয়ের জন্য গিয়েছেন, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কতটা জানেন বা সেখানে কাজ করার আগ্রহ কতটুকু আছে তা যাচাই করতেই এমন প্রশ্নের অবতারণা করেন ইন্টারভিউয়ার।
উত্তর দেয়ার পূর্বে কোম্পানি সম্পর্কে অনেক ভালো ধারনা নিয়ে যেতে হবে। কোম্পানির মিশন, ভিশন, ভ্যালু কি সেটা জেনে নেয়ার জন্য কোম্পানির ওয়েবসাইটে ভালোভাবে ঢু মেরে নিতে হবে। অথবা সে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এমন পরিচিতজনদের কাছ থেকেও ধারনা নিতে হবে। তাও যদি না পারা যায় তবে ফেসবুক বা লিঙ্কডইনে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছুটা খোঁজ খবর নিতেও দোষের কিছু নেই।
হার্ড ওয়ার্ক এবং স্মার্ট ওয়ার্ক বলতে কি বুঝেন?
প্রত্যেক সফল কাজের পেছনেই রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যাবস্যায়। আর কম সময়ে চমকে দেওয়া কাজ হছে স্মার্ট কাজ। দুটি প্রশ্ন আলাদা ভাবে কিংবা ভিন্ন আঙ্গিকে কিংবা ভিন্ন প্রয়োজনেও করা হতে পারে। সাধারন অর্থে এখানে আপনি কতটা পরিশ্রমী এবং উদ্যমী তা জানার জন্য এ ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। একই সাথে আপনি কোন দলে পড়েন বা কোন কাজ কখন গুরুত্ব বহন করে তা জানেন কিনা তাও দেখা হয়ে থাকে।
উত্তর দেওয়ার সময় মনে রাখবেন, স্মার্ট কাজ অবশ্যই বেশি গুরুত্ব পাবে। তাই বলে কাজের ধরন অনুসারে কখনো কখনো কঠোর পরিশ্রমও বেশি প্রাধান্য পেতে পারেনা এমনটাও নয়। সুতরাং আপনার কাছে কি জানতে চাওয়া হচ্ছে, তা ভালোভাবে বুঝে তবেই কৌশলে উত্তর দিন।
চাপের মধ্যে কাজ করা (Work under Pressure) বলতে কি বুঝেন?
জীবনের প্রতিটা পরতে চাপ না নিয়ে চলার অভিজ্ঞতা আছে এমন কেউ বোধহয় আছেন দাবী করার পূর্বে আরেকবার ভেবে নিন। কাজের চাপ বা প্রেশার আপনি কতটা পজেটিভলি গ্রহন করে মোকাবিলা করছেন তাই এখানে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। প্রেশারে কতটা অবিচল থেকে তাকে সামলেছেন তাই আপনার জন্যে প্লাস পয়েন্ট হয়ে থাকবে। উত্তর দেওয়ার সময় নিজের জীবনের কিছু উদাহরণ কিংবা পূর্বের কাজের কিছু উদাহরণ সামনে নিয়ে আসুন যেখানে নিজেকে খুব ইতিবাচক ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।
ভ্রমণ করাকে কিভাবে দেখছেন? প্রয়োজনে ভ্রমণ বা ট্রান্সফার হওয়াকে কিভাবে গ্রহন করবেন?
ভ্রমণ বা ট্রাভেলিং আপনার হবি, এটা হয়তো সিভিতে কপি পেষ্ট করে দিয়ে দিয়েছেন। অথবা সত্যিই উপভোগ করেন বলেই সিভিতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে যদি প্রতিদিন বা প্রায়শই ভ্রমণ করতেই হয় সেক্ষেত্রে কতটা উপভোগ করবেন- তা জানার প্রয়োজনেই অনেক সময় এ প্রশ্ন করা হয়। যে কোম্পানি সারাদেশ জুড়েই টিম পরিচালনা করছে, তাদের প্রয়োজনে আপনাকে একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে বদলি করতে পারে। পরবর্তী প্রমোশনের নিকটে নিয়ে যাবার লক্ষে ভ্রমণকে আপনি কতটা মানিয়ে নিয়ে গ্রহণ করতে পারবেন তাকেও ভাবনায় এনে উত্তর দেয়া এবং চাকরি নির্ধারন করা উচিত চাকরিদাতা এবং গ্রহীতা উভয়পক্ষ থেকেই। তার জন্যেই মাঝে মাঝে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন।
এই পর্বে শেষ কথা হলো, জানার কোন শেষ নেই। জ্ঞানের কোন সীমা-পরিসীমা নেই। তাই প্রতিদিন নতুন কিছু জানার জন্য দশ মিনিট সময় হলেও বই, ব্লগ, গুগল কিংবা সামাজিক/ প্রফেশনাল যোগাযোগ মাধ্যমে ভালো কোন লেখক/ ব্লগার/ অনুপ্রেরণাদাতাদের লেখা পড়ুন। জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম এখন সহজ এবং উন্মুক্ত। সুতরাং একে কাজে না লাগানো আপনার বিলিয়ন ডলারের বোকামি।
পরবর্তী পর্বে ধারাবাহিকভাবে থাকছে পরের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার কৌশল। এই ফাঁকে আজকের পরামর্শ অনুসরণ করে প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার নিজের মতো করে সাজিয়ে ফেলুন।
পরামর্শ দিয়েছেন:
কাইয়ুম ইসলাম সোহেল
হিউম্যান রিসোর্সেস প্রফেশনাল
kaiumislamsohel@yahoo.com