ঢাকা: ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে নতুন নিয়মে।
আবেদনের যোগ্যতা
আবেদনের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে প্রার্থীকে স্নাতক ডিগ্রিধারী ও কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে। এর পাশাপাশি শারীরিক যোগ্যতাও থাকতে হবে। পুরুষ প্রার্থীদের উচ্চতা হতে হবে কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, নারীদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। বুকের মাপ—পুরুষের বেলায় ৩২ ইঞ্চি (স্বাভাবিক) ও ৩৪ ইঞ্চি (সম্প্রসারিত)।
বয়স—৮ অক্টোবর ২০২১ তারিখের হিসাবে ১৯ থেকে ২৭ বছর। তবে ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে যাঁরা সর্বোচ্চ বয়সসীমা (২৭ বছর) অতিক্রম করেছেন তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন। ওজন—বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী অনুমোদিত পরিমাপের হতে হবে।
আবেদন অনলাইনে
police.teletalk.com.bd ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদনের শেষ সময় ৪ নভেম্বর ২০২১ বিকেল ৫টা। আবেদন ফি (৩০ টাকা) জমা দিতে হবে টেলিটক প্রি-পেইড সংযোগ থেকে এসএমএসের মাধ্যমে।
নিয়োগ ১১ ধাপে
প্রার্থী বাছাই করা হবে পর্যায়ক্রমে মোট ১১ ধাপে—
১. অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, ২. ওয়েববেজড স্ক্রিনিং, ৩. শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাইকরণ, ৪. শারীরিক সক্ষমতা যাচাই বা Physical Endurance Test, ৫. ওয়েববেজড আবেদন ফরম পূরণ, ৬. লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ, ৭. কম্পিউটার দক্ষতার পরীক্ষা গ্রহণ,
৮. মৌখিক পরীক্ষা, ৯. মেডিক্যাল টেস্ট বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ১০. পুলিশ ভেরিফিকেশন,
১১. ক্যাডেট এসআই (নিরস্ত্র) হিসেবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন।
♦ প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং : অনলাইনে আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ওয়েবনির্ভর প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং করা হবে। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের শারীরিক মাপ ও Physical Endurance Test-এর জন্য বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করা হবে। যোগ্য প্রার্থীদের মোবাইলে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাঠানো হবে। তারপর ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোডের পর প্রিন্ট (২ কপি) করে শারীরিক মাপ ও Physical Endurance Test-এর দিন নিয়ে যেতে হবে।
♦ শারীরিক মাপ ও Physical Endurance Test : প্রার্থীদের দরকারি কাগজপত্র (বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত) সঙ্গে নিয়ে নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থানে শারীরিক মাপ ও Physical Endurance Test-এ উপস্থিত থাকতে হবে। শুরুতে নির্ধারিত স্কেলে শারীরিক মাপ (উচ্চতা, ওজন, পুরুষ প্রাথীদের জন্য বুকের মাপ) নেওয়া হবে। শারীরিক মাপে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার ইভেন্টে অংশ নিতে পারবেন। এই পর্বে সনদ, প্রার্থীর ছবিসহ বেশ কিছু কাগজপত্র (বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত) সঙ্গে আনতে হবে। শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা সাতটি ইভেন্টের মাধ্যমে হবে। প্রতিটি ইভেন্টেই পাস করতে হবে। একটি ইভেন্টে ব্যর্থ হলে পরবর্তী ইভেন্টে অংশ নেওয়া যাবে না।
♦ প্রথম ইভেন্ট (দৌড়) : পুরুষ প্রার্থীদের এক হাজার ৬০০ মিটার দূরত্বে সাত মিনিট ৩০ সেকেন্ডে এবং নারী প্রার্থীদের এক হাজার মিটার দূরত্বে সাত মিনিটে দৌড় দিয়ে অতিক্রম করতে হবে।
♦ দ্বিতীয় ইভেন্ট (লং জাম্প) : পুরুষ প্রার্থীদের কমপক্ষে ১০ ফুট ও নারী প্রার্থীদের কমপক্ষে ছয় ফুট দূরত্ব জাম্প করে অতিক্রম করতে হবে। এই ধাপে উত্তীর্ণ হতে সর্বোচ্চ তিনবার সুযোগ পাবেন।
♦ তৃতীয় ইভেন্ট (হাই জাম্প) : পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩.৫ ফুট এবং নারী প্রার্থীদের কমপক্ষে ২.৫ ফুট উচ্চতা অতিক্রম করে জাম্প করে যেতে হবে। এই ধাপে উত্তীর্ণ হতে সর্বোচ্চ তিনবার সুযোগ পাবেন।
♦ চতুর্থ ইভেন্ট (পুশ আপ) : পুরুষ প্রার্থীদের ৪০ সেকেন্ডে ১৫টি পুশ আপ এবং নারী প্রার্থীদের ৩০ সেকেন্ডে ১০টি পুশ আপ দিতে হবে।
♦ পঞ্চম ইভেন্ট (সিট আপ) : পুরুষ প্রার্থীদের ৪০ সেকেন্ডে ১৫টি সিট আপ এবং নারী প্রার্থীদের ৩০ সেকেন্ডে ১০টি সিট আপ দিতে হবে।
♦ ষষ্ঠ ইভেন্ট (ড্র্যাগিং) : পুরুষ প্রার্থীদের ১৬০ পাউন্ড ওজনের টায়ার টেনে ৩০ ফুট দূরত্ব এবং নারী প্রার্থীদের ১২০ পাউন্ড ওজনের টায়ার টেনে ২০ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।
♦ সপ্তম ইভেন্ট (রোপ ক্লাইমিং) : পুরুষ প্রার্থীদের কমপক্ষে ১২ ফুট এবং নারী প্রার্থীদের কমপক্ষে আট ফুট রোপ ক্লাইমিং বা দড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হবে।
ইউটিউবে বাংলাদেশ পুলিশের অফিশিয়াল চ্যানেলে ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট পদের নিয়োগ পরীক্ষার ‘সর্বশেষ পরিবর্তিত পদ্ধতি’ নামের একটি অনুশীলন ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। এই ভিডিও দেখলে Physical Endurance Test-এর ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাবে।
পুনরায় আবেদন : শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা বা Physical Endurance Test-এর সাতটি ইভেন্টে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সব প্রাতিষ্ঠানিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ, কম্পিউটার সনদ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইন্সেস, মুক্তিযোদ্ধা সনদসহ অন্য তথ্যাবলি ব্যবহার করে লিখিত মনস্তত্ত্বসহ কম্পিউটার দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে আবেদন করে ৩৫০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। তারপর পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষার প্রস্তুতি
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও লিখিত পরীক্ষা একই বিষয়গুলোর ওপর অনুষ্ঠিত হবে। তবে অন্যান্য বছরে মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় ২৫ নম্বর ছিল, এবার ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হলো—
বাংলায় ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। সাধারণত একটি রচনায় ১৫ নম্বর, ভাবসম্প্রসারণে ১০, এককথায় প্রকাশে ৫, অর্থসহ বাক্য রচনায় ৫ ও বাংলা অনুবাদে ১৫ নম্বর। ইংরেজিতেও ৫০ নম্বর—Essay 15 marks, Appropriate preposition 5, Idioms and Phrase 5, Letter/Application 10, Translations 15.
বাংলা ও ইংরেজি উভয় বিষয়েই অনুবাদে তুলনামূলক বেশি নম্বর বরাদ্দ থাকে; তাই অন্যান্য টপিকের চেয়ে অনুবাদে বাড়তি জোর দিতে হবে। অনুবাদের প্রস্তুতির জন্য মহিউদ্দীনের লেখা Translation for competitive বইটি বেশ কাজে দেবে। এ ছাড়া ইংরেজির প্রস্তুতির জন্য পিসি দাশের গ্রামার বইটি পড়া যেতে পারে।
সাধারণ জ্ঞানের জন্য বরাদ্দ ৫০ নম্বর। এ ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা ও রচনা লিখতে হয়। এ অংশের প্রস্তুতির জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, পুলিশবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, মুক্তিযুদ্ধ ও তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন টপিক জানা থাকতে হবে। বাজারের মানসম্মত গাইড বইয়ের পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোও নিয়মিত পড়তে হবে।
পাটিগণিতে ৫০ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে। এখানে গসাগু ও লসাগু, ভগ্নাংশ, সরলীকরণ, ঐকিক, গড়, অনুপাত ও সমানুপাত, শতকরা ও লাভ-ক্ষতি, সুদকষা, পরিমাপ, ক্ষেত্র ইত্যাদি থেকে সাধারণত প্রশ্ন আসে। গণিতের প্রস্তুতির জন্য সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য বই অনুশীলন করলে প্রস্তুতি পাকাপোক্ত হবে।
মনস্তত্ত্ব দক্ষতায় ৫০ নম্বর বরাদ্দ। এ অংশে সাধারণত ভাষা ও সাহিত্য, সাদৃশ্য বিচার, সাংকেতিক বিন্যাস বা পুনর্বিন্যাস, সম্পর্ক ও বিশেষত্ব নির্ণয়, অসম্ভাব্যতা বিচার, বর্ণবিন্যাস ও শব্দ গঠন, গাণিতিক যুক্তি, জ্যামিতির মৌলিক বিষয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন করা হয়। এ অংশের প্রস্তুতির জন্য বাজারে প্রচলিত ভালো কোনো প্রকাশনী/লেখকের ‘পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষার গাইড’ বই অনুশীলন করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ইউটিউব থেকে মনস্তাত্ত্বিক দক্ষতার বিষয়গুলো অনুশীলন করলে কাজে লাগবে।
কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষা
লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নির্ধারিত স্থান, তারিখ ও সময়সূচি অনুযায়ী কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষায় (MS Office, Web Browsing, Troubleshooting) অংশগ্রহণ করতে হবে।
বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষা
কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নির্ধারিত স্থান, তারিখ ও সময়সূচি অনুযায়ী ৫০ নম্বরের বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। লিখিত, মনস্তত্ত্বসহ বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে নিয়োগবিধি মোতাবেক উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা
প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থানে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন
স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যোগ্য প্রার্থীরা পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করবেন। পুলিশ ভেরিফিকেশনে সন্তোষজনক বলে বিবেচিত হলে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে বাংলাদেশ পুলিশের ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হবে।
প্রশিক্ষণ
ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর অব পুলিশ (নিরস্ত্র) হিসেবে নির্বাচিত প্রার্থীদের বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে (সারদা, রাজশাহী) এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রশিক্ষণকালীন সরকারি বিধি মোতাবেক তারা প্রতি মাসে প্রশিক্ষণ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
নিয়োগ ও চাকরির সুবিধাদি
সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী প্রার্থীরা জাতীয় বেতন স্কেলের (২০১৫) দশম গ্রেডে (১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা ও অন্যান্য সুবিধা) শিক্ষানবিশ সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ পাবেন। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বিনা মূল্যে পোশাকসামগ্রী, ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা এবং নিজ ও পরিবারের নির্ধারিত সংখ্যক সদস্যের জন্য প্রাপ্যতা অনুযায়ী পারিবারিক রেশনসামগ্রী স্বল্পমূল্যে প্রাপ্য হবেন। নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য প্রচলিত নিয়মানুযায়ী উচ্চতর পদে পদোন্নতিসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষা
তিনটি বিষয়ে মোট ২৫০ নম্বরের লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় প্রার্থীদের অংশ নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
এনটি