ঢাকা: করোনায় দেশে এ পর্যন্ত যত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, বায়ুদূষণে প্রতি বছরেই তা হচ্ছে। সকল দূষণ বিবেচনায় বায়ূদূষণের প্রভাব তিনগুণ বেশি।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের নিঃসরণ মানমাত্রার পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মাহমুদা ইসলামের সঞ্চালনায় ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্য এবং সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম মনজুরুল হান্নান খান; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং ফিনল্যান্ডের সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কো-ফাউন্ডার লরি মিল্লিভিরটা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বিদেশিরা তাদের ইন্টারেস্ট অনুযায়ী গবেষণা করে, নিজেদের স্বার্থটা আগে দেখে। তাই আমাদের উন্নয়নের সকল গবেষণা আমাদের দেশীয় গবেষকদের দিয়ে করানো দরকার। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। বায়ুদূষণের ডাটা যখন প্রকাশ করা হয় তখন ইনডোর ও আউটডোর আলাদা ডাটা প্রকাশ করা জরুরি।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল উন্নয়ন হতে হবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় মাথায় রেখে। উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট নেওয়ার সময় আগেই স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। মাস্টার প্ল্যান করার সময় জনসাধারণের মতামত নেওয়া দরকার। পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিকল্পনার সময় দূষণ বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ সকল উন্নয়নই হলো মানুষের জন্য। তাই জনস্বাস্থ্য সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে, যোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, উন্নত দেশগুলো তাদের দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করার সময় নিঃসরণ মাত্রার যে মানদণ্ড মেনে চলে, সেই মানমাত্রা উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আমাদের দেশে কাজ করার সময় মানে না।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমাদের দেশে যে মেগাপ্রজেক্ট হচ্ছে, তা হেলথ ইমপ্যাক্ট বিবেচনায় অর্থনৈতিক মূল্য নিরূপণ করা দরকার। আমাদের উচিত সবুজ চোখে সকল উন্নয়নকে দেখা। পরিবেশ সম্মত হয় না, এমন প্রজেক্ট বাতিল করা উচিত। আমাদের দেশ থেকে ১০০০ জন ইয়ুথ ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করতে হবে, যাতে তারা সব জায়গায় বাংলাদেশের ঝুঁকির দিকগুলো তুলে ধরতে পারেন।
ড. এস এম মনজুরুল হান্নান খান বলেন, যে উন্নয়ন মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সে উন্নয়ন কতটা কাম্য, তা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ভেবে দেখতে হবে।
সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, বায়ুমান নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের জীবাশ্ম জালানি-ভিত্তিক উৎপাদন থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসতে হবে।
অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, প্রজেক্টগুলোর এনভায়রনমেন্টার ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) ত্রুটিপূর্ণ। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিবেশগত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো এসব ক্ষেত্রে যা মানছে, তা আমাদের এখানে মানা হচ্ছে না।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গ্রিন এনার্জি এবং এনার্জি সিকিউরিটি এ দুটোকে আমরা সাংঘর্ষিক মনে করছি। কার্বন নিঃসরণের জন্য আমাদের উপকূল ডুবছে। কিন্তু আমরা নিজেরাই কার্বন নিঃসরণ করছি এবং বিভিন্ন ফোরামে দাবি তুলছি ক্ষতিপূরণের জন্য। আবহাওয়া বার্তার পাশাপাশি সরকারিভাবে বায়ূর মানমাত্রার খবরও দৈনন্দিন প্রকাশ করা দরকার।
লরি মিল্লিভারটা বলেন, বাংলাদেশের মানমাত্রার মধ্যে সালফার ও মারকিউরি উল্লেখ নেই। এটি যুক্ত করা দরকার। সেই সাথে প্রতিনিয়ত কলকারখানায় নিঃসরণ মাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং আইন করে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, পরিবেশবিদরা বায়ুদূষণের ওপর আরও বেশি বেশি গবেষণা করে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিতকরণ অব্যাহত রাখবেন এবং রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন নীতি নির্ধারণের সময় শিল্প ও পরিবেশকে সমন্বয় করে চিন্তা করেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, ইয়ুথ নেট, আর্থ সোসাইটি, জিএলটএস, ফেনী ফোরাম, বিভিন্ন সংস্থার গবেষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী, সামাজিক ও পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
এইচএমএস/এমজেএফ