ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় মোখা এখন গতিবেগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এর কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠে যাচ্ছে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
তবে উপকূলে আঘাত হানার পূর্বে গতি কিছুটা কমবে বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
উত্তর ভারত সাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে পর্যবেক্ষক সংস্থা আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া বিষয়ক কেন্দ্রও (আরএসএমসি) একই তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরও সংস্থাটির সদস্য।
নয়াদিল্লা ভিত্তিক এই সংস্থার আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. তৃষানু বণিক জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। এটি বর্তমানে ৮ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগোচ্ছে।
একই কথা জানিয়েছেন ভারতের আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞানী ড. আনন্দ কুমার দাশও। তার মতে, সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছে মোখা। রোববার (১৪ মে) সন্ধ্যা নাগাদ গতিবেগ কিছুটা কমে ২১০ কিলোমিটারে নেমে আসতে পারে। রোববার (১৪ মে) রাতের প্রথম দিকে গতিবেগ আরও কমে ২০০ কিলোমিটারে নেমে আসতে পারে। এরপর তা আরও কমে উপকূলে ১৭৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউ বন্দরের মধ্যদিয়ে উপকূলে উঠে আসবে রোববার (১৪ মে) দুপুরের দিকে। সোমবার (১৫ মে) নাগাদ তা স্থল নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার সময় উপকূলে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তবে কক্সবাজার উপকূলের চেয়ে মিয়ানমারের উপকূল জলোচ্ছ্বাসের অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় কমিশনের সহযোগিতামূলক ফ্রেমওয়ার্ক এবং আন্তর্জাতিক দুর্যোগ সতর্কতা বিষয়ক সংস্থা গ্লোবাল ডিজাস্টার অ্যালার্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন সিস্টেম (জিডিএসিএস) জানিয়েছে, মোখার ঝুঁকিতে রয়েছে ২৮ লাখ মানুষ। এর মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ২০ লাখ এবং বাংলাদেশের রয়েছে প্রায় আট মানুষ।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহও এই ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
তবে পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এছাড়া উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৫-০৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (৮৯ মি.মি. বা তার বেশি) বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধস হতে পারে।
এদিকে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মোখা নামটি ইয়েমেনের দেওয়া। কফির জন্য বিখ্যাত স্থানীয় একটি বন্দরের নাম মোখা। কালক্রমে সেখানকার কফির নামকরণও করা হয়েছে মোখা। ইংরেজিতে শব্দটি Mocha লেখা হলেও, এর উচ্চারণ হচ্ছে Mokha।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ (escap) আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম ঠিক করে। এক্ষেত্রে এসকাপ সদস্যভূক্ত ১৩টি দেশের দেওয়ার নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়।
বর্তমানে যে তালিকা রয়েছে সেখানে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া আছে। এর মধ্যে মোখা নামটি ১৩ নম্বর। অর্থাৎ ওই তালিকা থেকে পরবর্তী ১৫৬টি ঝড়ের নাম ঠিক করা হবে।
আরও পড়ুন:
ঘূর্ণিঝড় মোখা: জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতির শঙ্কা কম
কক্সবাজার-কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে উপকূলে উঠতে পারে ‘মোখা’
ঘূর্ণিঝড় মোখা: ঝুঁকিতে কক্সবাজার
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে মোখা
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
ইইউডি/এনএস