ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কক্সবাজার থেকে ৪৫০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ উঠে যাচ্ছে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ভারতের আবহাওয়া অফিস শনিবার (১৩ মে) মধ্যরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে। বর্তমানে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার গতিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কিলোমিটার।
দেশটির আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রাতেই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ কমে ২৩০ কি.মি.তে নেমে আসবে। রোববার (১৪ মে) সকালের দিকে গতিবেগ আরও কিছুটা কমবে। আর দুপুরের দিকে উপকূলে আঘাত হানার সময় সময় গতিবেগ থাকবে ২১০ কিলোমিটারের মতো।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মোখা ১৪ মে (রোববার) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। শনিবার (১৩ মে) রাতেই চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে।
মোখার ভয়াবহতা বিবেচনায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ আট নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৫-০৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি বা তার বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধস হতে পারে।
এই অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
রোববার (১৪ মে) দুপুরের দিকে ঝড়টি কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে উপকূলে উঠে আসবে। তখন ঝড়ের গতি থাকবে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ঝড়ের ব্যাস সাড়ে চারশো কিলোমিটার, ফলে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দরের নিকট দিয়ে এটি স্থলভাগে প্রবেশ করলে তাণ্ডব চালাবে আশাপাশের দুইশ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে। বর্তমানে এটি প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে সামনের দিকে এগোচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা নামটি ইয়েমেনের দেওয়া। কফির জন্য বিখ্যাত স্থানীয় একটি বন্দরের নাম মোখা। কালক্রমে সেখানকার কফির নামকরণও করা হয়েছে মোখা। ইংরেজিতে শব্দটি Mocha লেখা হলেও এর উচ্চারণ হচ্ছে Mokha।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ (escap) আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়ার ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম ঠিক করে। এক্ষেত্রে এসকাপ সদস্যভূক্ত ১৩টি দেশের দেওয়ার নামের তালিকা থেকে পর্যাক্রমে এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে যে তালিকা রয়েছে, সেখানে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া আছে। এর মধ্যে মোখা নামটি ১৩ নম্বর। অর্থাৎ ওই তালিকা থেকে পরবর্তী ১৫৬ ঝড়ের নাম ঠিক করা হবে।
আরও পড়ুন >> ৩ বিভাগে অতি ভারী বর্ষণের আভাস, ভূমিধসের শঙ্কা
মোখার ব্যাস ৪৫০ কিলোমিটার, প্রথমে আঘাত হানবে মিয়ানমারে
কক্সবাজার-কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে উপকূলে উঠতে পারে ‘মোখা’
বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
ইইউডি/এসএএইচ