লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীর নির্মাণাধীন তীররক্ষা বাঁধের একটি অংশের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলার কমলনগর উপজেলার পাটওয়ারীহাট রাস্তার মাথার দক্ষিণ অংশের নির্মাণাধীন বাঁধের ওপর দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে জোয়ারের পানি গড়াতে দেখা গেছে।
এতে বাঁধ টেকসই হওয়া নিয়ে শঙ্কিত নদীর তীরের বাসিন্দারা।
নির্মাণাধীন বাঁধের ওই অংশের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীর বড়খেরী, লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপণ্ডিতের হাট বাজার তীররক্ষা প্রকল্প নামে ৩৩.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি ২০২১ সালের ১ জুন পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি কমলনগরে মাতাব্বর হাট এলাকায় দুটি লটের কাজ উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। এরপর থেকে তীররক্ষা বাঁধের কাজ চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলনগর উপজেলার পাটওয়ারীর হাট ইউনিয়নের পাওয়ারীর হাট রাস্তার মাথায় দক্ষিণ অংশে এবং উত্তর অংশে দুটি লটের (Package no- Lak/W-19/Lot-1 ও Lot-2) কাজের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সাব ঠিকাদারের মাধ্যমে এ দুটি লটের কাজ করাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। লট দুটির আওতাধীন কাজের মধ্যবর্তী অংশটি উত্তর এবং দক্ষিণ অংশের তুলনায় একেবারে নিচু। এছাড়া নির্মাণাধীন ওই বাঁধের পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। ফলে খুব সহজে জোয়ারের পানি বাঁধের ওপর দিয়ে গড়াচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই অংশটিতে নিম্নমানের কাজ হয়েছে। বাঁধের মাটির নিচে দেওয়া হয়েছে গাছের গুঁড়ি। এছাড়া পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করা হয়নি। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে ওইস্থান দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি অনবরত প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে নির্মাণাধীন বাঁধের ওই স্থানটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানির সঙ্গে বাঁধের মাটি ধুয়ে যাচ্ছে।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, দুটি লটের মধ্যে ১ নম্বর লটের কাজের মান একেবারে খারাপ হয়েছে। এনায়েত আব্বাসী নামে রামগতির এক বাসিন্দা কাজটি সাব-কন্ট্রাক্টে নিয়েছেন। গত কয়েকদিন থেকে কাজ না করে তিনি লাপাত্তা হয়ে আছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, কাজ একেবারেই ধীরগতিতে চলছে। বর্ষা শুরুর আগেই এ স্থানটিতে পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করা হলে জোয়ারের পানি ঢুকতো না। জোয়ারের পানি আসা-যাওয়ার কারণে বাঁধের এ অংশটি হুমকির মুখে পড়েছে।
পাওয়ারীর হাট ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, বাঁধের ১ নম্বর লটের কাজ সাব-ঠিকাদারের মাধ্যমে করানো হচ্ছে। এনায়েত আব্বাসী নামে ওই সাব-কন্ট্রাক্টর সঠিক সময়ে কাজটি করতে পারেননি। কাজে অনেক ধীরগতি এবং অনিয়ম হয়েছে। এতে আমাদের এলাকাটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হারুন পাটওয়ারী বলেন,
বাঁধের পাশের বিশালাকৃতির একটি পুকুর ভরাট না করায় নির্মাণ কাজ ঝুঁকিতে পড়েছে। এছাড়া এ এলাকাটি নিচু, তাই জোয়ারের পানি খুব সহজে উঠে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে সাব-কন্ট্রাক্টার এনায়েত আব্বাসীর ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার বোরহান বাংলানিউজকে বলেন, সবগুলো লটের কাজ আমাদের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী এবং কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জিও ব্যাগ ড্রাম্পিংসহ সব কাজ করা হচ্ছে।
কাজে ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, এ লটগুলোর টেন্ডার দেরিতে হয়েছে। তাই কাজও দেরিতে শুরু করা হয়েছে। ঈদের ছুটির কারণে কাজ এখন বন্ধ থাকলেও আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে এবং দ্রুত কাজ শেষ করা হবে। এছাড়া বাঁধের পাশের পুকুরও বালু দিয়ে ভরাট করা হবে।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মানজুর এলাহী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের উপস্থিতিতে কাজ হচ্ছে। তাই কাজের মান খারাপ হবে না। তবে ওই লটে ৬৯ হাজার ৪১১টি জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত ৩১ হাজারের মতো জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করা হয়েছে। সবগুলো জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং করা হলে জোয়ারের পানি ঢুকতে পারতো না।
কাজে ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ করতে তাগাদা দিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২৩
এসআই