লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ফজুমিয়ারহাট বাজারের চরঠিকা খালটি বেদখল হয়ে পড়েছে। খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা।
প্রশাসনের হিসাবে, ৮০ দখলদারের কব্জায় রয়েছে খালটি।
এদিকে খালপাড়ের বসত বাড়িতে যাতায়াতের জন্য খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। খালের কোনো কোনো অংশ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পরিণত হয়েছে নালায়। ফলে এক সময়ের স্বচ্ছ পানির প্রবহমান খালটি এখন প্রায় মৃত। এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ব্যাহত হচ্ছে ফসলি জমির চাষাবাদ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা খালটি দখল করে সেটিকে মৃত বানিয়ে ফেলেছে। খালের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পুনঃখনন করলে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে। সেই সঙ্গে উপকৃত হবে কৃষকরা।
উপজেলা প্রশাসন বলছে, খালটি রক্ষায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ৮০’র দশকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নে চরঠিকা এলাকায় খালটি খনন করে সরকার। পরে এটি চরঠিকা খাল নামে পরিচিতি লাভ করে। তখন এ খালের পানি দিয়ে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হতো। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশন হতো এ খাল দিয়ে। কিন্তু গেল ৪০ বছরের ব্যবধানে খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
ফজুমিয়ারহাট বাজার অংশে থাকা খালের ওপর তৈরি হয়েছে অবৈধ স্থাপনা, আর উত্তর অংশে গড়ে উঠেছে বসতি। এতে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে খালটি।
স্থানীয় বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কমলনগরের একটি গ্রামকে শহর ঘোষণা করেছে সরকার। সেটি চরকাদিরা ইউনিয়নের চারঠিকা গ্রাম। কিন্তু এ গ্রামের নামে চরঠিকা খালটি এখন দখলদারদের কবলে। ফজুমিয়ারহাট বাজারের ময়লা আবর্জনা এ খালে ফেলা হচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে গোটা পরিবেশ। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাজারের মধ্যে থাকা খালের ওপর দোকানপাট নির্মাণ করে খালের জমি দখল করে নিয়েছে। বাজারের উত্তরপূর্ব অংশে দখলদাররা ঘর বাড়ি তৈরি করে ফেলছে। এতে বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটসহ বাড়িঘরে পানি ওঠে। এ গ্রামকে শহরে রূপান্তর করতে হলে খালটি অবশ্যই দখলমুক্ত করতে হবে।
চরঠিকা গ্রামের মোহাম্মদ উল্যা আবুল বাশার বলেন, খালের মধ্যে থাকা বাজারের ময়লা-আর্বজনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালের পাড় দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা দায়। নাক বন্ধ করে হাঁটতে হয়।
সাবেক মাদরাসার শিক্ষক নুর নবী, স্থানীয় কৃষক মো. ইউসুফ, মো. কবির, মনির হোসেন, সফিক উল্যা, মো. ইদ্রিস ও শাহ আলমসহ অনেকে বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় খালের পানি দিয়ে আমরা বোরো ধানের আবাদ করতে পারতাম। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এখন এ খালে পানি ঢুকতে পারে না। খালের ওপরের বসতবাড়িতে চলাচলের পথ তৈরি করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই বোরো আবাদ হয় না। আবার বর্ষায় খালের দুই পাড়ে থাকা ফসলি জমির পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় না। এতে আমন চাষাবাদও ব্যাহত হচ্ছে। তাই খালটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল্লাহ মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, খাল দখল ও দূষণের কারণে প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষক বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দখল ও দূষণমুক্ত হলে অন্তত এক হাজার হেক্টরের বেশি জমি বোরো ধানের চাষাবাদের আওতায় আসবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বাংলানিউজকে বলেন, খালের ওপর থাকা ৮০ জন অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরিই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
খাল পুনঃখননের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
এসআই