সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলেই গাবুরার মানুষ আঁৎকে ওঠেন। কারণ নদীর পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙে প্লাবনের শঙ্কা তৈরি হয়।
এছাড়া পাঁচটি পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। ঘূর্ণিঝড় হামুনের তেমন প্রভাব এখানে পড়বে না, তবে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে বলে আবহাওয়া বার্তায় জানানো হয়েছে। এখানে সকাল থেকে কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদের দেখা মিলছে। কখনো আকাশ গুমোট হয়ে থাকছে। সব সাইক্লোন শেল্টার খুলে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম এভাবেই তার এলাকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
শুধু গাবুরা ইউনিয়ন নয়, শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, পদ্মপুকুর, কৈখালী, গোলাখালীসহ পার্শ্ববর্তী অনেক এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। এছাড়া আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া ও আশাশুনি সদরের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া ও চুনা নদীতে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী।
মুন্সীগঞ্জের বিলাল হোসেন জানান, উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ ঝড় জলোচ্ছ্বাস এলে শ্যামনগর উপকূলে কিছু না কিছু প্রভাব পড়েই।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় উপজেলার ১৬৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছ। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার মজুদ রাখা রয়েছে। জানমালের নিরাপত্তার জন্য দুই হাজার ৮শ সিপিপি সদস্য ও দুই হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগরে কর্মরত এসডিও জাকির হোসেন জানান, শ্যামনগরে ৩৬০ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ আছে। এর মধ্যে ৫টি পয়েন্ট বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বেশ কিছু এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে কাজ চলছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, পাউবো-২ এর আওতাধীন বেড়িবাঁধগুলোর ভেতরে ২৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে, আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, পাউবো-১ এর আওতায় ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে তিন কিলোমিটার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, বড় ধরনের দুর্যোগ না এলে বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, সাতক্ষীরা উপকূলে ঘূর্ণিঝড় হামুন সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা কম। তবে এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ৩-৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি সভা করেছে সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর জানান, সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনির তিন শতাধিক সাইক্লোন শেল্টার ও পাঁচ হাজারের বেশি সিপিপি সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস, পাউবো, স্বাস্থ্য বিভাগসহ কুইক রেসপন্স রিলেটেড দপ্তরগুলো সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় হামুনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
আরএ