বরগুনা: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর ও হরিণঘাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া খাকদোন, টিয়াখালী নদী, টিয়াখালী দোন, বগীর খাল, বেহুলা নদী, নিদ্রা খালসহ জেলার প্রধান নদী ও খালের এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে।
রোববার ( ২৬ মে) বিকেলে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক মো. মাহাতাব হোসেন মোবাইলফোনে বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বরগুনার পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার জোয়ারের উচ্চতা ছিল ২ দশমিক ৬৪ মিটার। যা বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপরে।
এদিকে জোয়ারের পানি বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল। ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে গেছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের। রাস্তা ঘাটে কোমর সমান পানি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানুষ। কুমড়াখালী, আমতলীর আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে পুরো গ্রাম। ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি বৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে শক্তি বাড়িয়ে আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে ঘূর্ণিঝড়টি। নদীর পানি বেড়ে উপকূল ছাপিয়ে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। ভেঙেছে বাঁধ।
অন্যদিকে, বরগুনা পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে দোকানের মালামাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরে সরকারি আবাসনসহ বরগুনায় তিনটি ফেরিঘাটের গ্যাং ওয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে দুপাড়ের পণ্যবাহী গাড়িসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি শিকার হচ্ছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী বরগুনায় বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৩০০টি প্রাকৃতিক খাল রয়েছে। এ জেলায় মোট ১৬০ বর্গ কিলোমিটার নদী রয়েছে যা জেলার মোট আয়তনের ২২ ভাগ।
তালতলীর তেতুঁলবাড়িয়া গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধা খাদিজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের সদস্যদের জন্য পাসের এলাকার নিকটতম স্বজনদের বাড়ি থেকে খাবার এনেছি। এলাকার অধিকাংশ টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লবণ পানি ঢুকে পড়েছে। তাই খাবার পানি সংকটে এখন হাজারও মানুষ।
কুমড়াখালী গ্রামের ছালাম বলেন, আমাদের কুমড়াখালী গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পুরো গ্রাম তলিয়ে গেছে। পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল সব শেষ। ঘরবাড়ির মাটি নরম হয়ে গেছে যেকোনো সময় ঘরবাড়ি ধসে পড়ে যেতে পারে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী মিলনায়তনে শনিবার (২৫ মে) জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেখানে জানানো হয়েছে, জেলায় ৬৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, তিনটি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। পাশাপাশি ৯ হাজার ৬১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলায় ছয়টি কন্ট্রোল রুম এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটিসহ সাতটি কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৪
এসআরএস