ঢাকা, রবিবার, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

রংপুরের ভূমিকম্পে আপাতত শঙ্কার কিছু নেই

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪
রংপুরের ভূমিকম্পে আপাতত শঙ্কার কিছু নেই

ঢাকা: রংপুরে ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সচেতন মহলে। তবে আপাতত শঙ্কা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।



বিশেষজ্ঞদের মতে, শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভুটানে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটি ঢেউ এসে উত্তরের এই অঞ্চলে লাগলেও এটি ছিল হালকা মানের। রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূকম্পনটিতে উৎপত্তি স্থলেও বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।

তাদের মতে, বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট কিছু ভূ-কম্পন্ন হয়। আবার ছোট ছোট ভূকম্পনে ফলে ভূগর্ভের জমে থাকা শক্তিও কমে যায়। এই ধরনের কোনো ঘটনা সম্প্রতি ঘটেনি। ফলে আপাতত আতঙ্কের কিছু নেই।

রংপুরসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে আগেই ঘোষণা করেছে আবহাওয়া অফিস। সেই দিক থেকে ঝুঁকি রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ গোলাম মোস্তফা বলেন, রংপুরে চলতি বছর গতকালই প্রথম ভূমিকম্প হয়েছে। এটি ছিল হালকা ধরনের। উৎপত্তি ভুটানে। এই অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এই ভূমিকম্পের ফলে আতঙ্কের কিছু ঘটেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশের বাইরে মেঘালয়ের ডাউকি ফল্টের কারণে আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলও ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে ছোট এবং মৃদু ভূমিকম্প হচ্ছে। সাধারণত মৃদু ভূমিকম্প বা ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়, বড় ভূমিকম্প হওয়ার আগে আগে। দুটো বিষয় আছে। একটা হচ্ছে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়ে এনার্জিটা বের হয়ে যায়। আরেকটা হলো যেখানে ভূমিকম্প হয়, সেই জায়গার চরিত্রই হলো এর চেয়ে বড় ভূমিকম্প জেনারেশন করতে পারে না।

এদিকে আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, আমাদের যতদূর জানা, সম্ভবত ১৮৯৭ সালের দিকে সিলেট অঞ্চলে একটা বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ভূমিকম্পের একটা ধরণ হচ্ছে, পিরিয়ডোক্যালি বড় ভূমিকম্প হয়। সেগুলো সাধারণত একশ পরপর ঘুরে আসে। সেই হিসেবে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছে, তাতে কিন্তু ওই মাত্রার কম্পন হয়নি। বাংলাদেশকে তিনটা জোনে ভাগ করা হয়েছে। একটা হলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, একটা হলো মধ্যম ঝূঁকিপূণ ও আরেকটা হলো কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুরের কিছু অংশ ও চট্টগ্রাম অঞ্চল অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে পড়েছে।
তাই এসব অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাস নেই এবং ১২০ থেকে ১২২ আগে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, তাই এর সম্ভবনা উড়িয়ে যায় না। সুতরাং বড় ভূমিকম্প হতেই পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এটা এমন একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশ্বের কারোরই রোধ করার উপায় জানা নেই। তবে আমরা যেটা করতে পারি, সেটা হচ্ছে তাৎক্ষণিক কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারি। এক্ষেত্রে ভবনের ভেতরে থাকলে, নিচে থাকলে বাইরে বের হয়ে যেতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল্ট লাইনে বড় ভূমিকম্প হয়। আর বাংলাদেশে ফল্ট লাইনে আশেপাশের দেশ। সেই হিসেবে বড় ভূকম্পনে বড় প্রভাব পড়বে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে উৎপন্ন হওয়া প্রত্যেকটা বড় ভূকম্পনের প্রভাবই দেশে বড় করেই এসেছে।  

১৮৬৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪টি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। এগুলোর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৬ থেকে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার। সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয়েছে ১৮৯৭ সালে, এর উৎপত্তি ছিল ভারতে। এরপর ১৯৫০ সালের ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তিও ভারতের আসামে। এছাড়া মিয়ানমার, ভুটান, নেপালের ভূকম্পনের ঢেউও এসে পড়ে বাংলাদেশে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছ, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট,ঢাকা, কুমিল্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু অংশ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।  ঢাকার একটি অংশ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিছু অংশ মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে৷ আর খুলনা ও বরিশাল বিভাগকে কম ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।