ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ড. এম আতিক রহমান

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে ছবি- মানজারুল ইসলাম, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট, খুলনা অফিস।

খুলনা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামনে খুবই কঠিন দিনের পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। এ পরিবর্তনে সুন্দরবন এবং সুন্দরবন অঞ্চলের সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

আমাদের নতুন প্রজন্মকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারি।

বাংলানিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান এ সব কথা বলেন।

শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিসিএএস-এর নিরালার খুলনা অফিসে এ সাক্ষাৎকার দেন তিনি।

ড. আতিক রহমান জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার বিজ্ঞান পরিষদ (আইপিসিসি) চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনের অন্যতম লিড অথর (মূল লেখক)। পরিবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ পরিবেশ সংস্থা (ইউএনইপি) তাকে ২০০৮ সালের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের 'চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ' পুরস্কারে ভূষিত করে।

বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদফতর তাকে 'এনভায়রনমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০০৮' প্রদান করে।

ড. আতিক রহমান বোস্টনের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর। এর আগে প্রায় দেড় দশক তিনি অক্সফোর্ড ও এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা করেন। ১৯৭৭ সালে লন্ডনের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে ড. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে উষ্ণতা বৃদ্ধির তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

তিনি বলেন, এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের ওপর  ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে; যার প্রমাণ মিলছে খুলনার দাকোপে। এখানকার মানুষের রোগ বেশি।
 
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদন কম হচ্ছে, যা অর্থনীতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।
 
সুন্দরবনের শ্যালা নদীর দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ফার্নেস তেলের জাহাজ দুর্ঘটনার কারণে সুন্দরবনসহ পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবনের মূল যে ‘ইকোলজিক্যালি  ক্রিটিক্যাল এরিয়া’ (প্রতিবেশগত সমস্যাসংকুল) তার ভেতর দিয়ে শ্যালা নৌরুটটি প্রবাহিত। এ রুটে নদীতে জাহাজ চলাচলের কোনো বৈধতা নেই। যেখানে-সেখানে তেলবাহী জাহাজ কার্গো চলায় গত বছরের শেষদিকে টাঙ্কার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে দুটি মন্ত্রণালয় কোনো গবেষণা ছাড়াই বিপরীত মন্তব্য দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বনআইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ আইন এবং দুটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করে শ্যালা নদী দিয়ে আবারও জাহাজ চলাচল করছে।

আক্ষেপ করে পরিবেশবিদ ড. আতিক রহমান বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা নড়েচড়ে বসি। ব্যাপক তৎপরতা দেখাই। আবার কিছুদিন পর তা পুরোপুরি ভুলে যাই।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর বুম দিয়ে তেল আটকানো যেতো। বুম হলো বেলুনের মতো। এটা ফুলিয়ে পানির ওপরে রাখা যেতো। পরে পাইপের মাধ্যমে তেল সরিয়ে ফেলা সম্ভবপর ছিল। এতে ক্ষতি কম হতো।

তিনি বলেন, সুন্দরবন ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর অংশ হওয়ায় আমাদের দায়িত্ব এটাকে রক্ষা করা।

সুন্দরবনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব (যেমন- লবণাক্ততা, সাইক্লোন বৃদ্ধি) এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, সে বিষয়ে ড. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১০ বছর পর পর য়ে ধরনের ঘূর্ণিঝড় হওয়ার কথা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সে মাত্রায় ঘূর্ণিঝড় এখন কয়েক বছরের ব্যবধানে হচ্ছে। তার প্রমাণ সিডর, আইলা, নার্গিস ও মহাসেন হওয়ার মধ্যকার সময়ের ব্যবধান।

তিনি জানান, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় তার সংগঠন কাজ করছে। ‘সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও সক্ষমতা বৃদ্ধির সম্মিলিত প্রচেষ্টা’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, খুলনার পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর অঞ্চলে কাজ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সুন্দরবন নিয়ে যে প্রকল্প রয়েছে, তার তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে। এগুলো হলো- প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ; জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও অভিযোজন এবং জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকায়ন।

এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী, উন্নয়ন সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার এক সঙ্গে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।