ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

শহরের গাছে গাছে ওতপাতা গিরগিটি

ছবি: নাজমুল হাসান, লেখা: সৈয়দ ইফতেখার আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০১ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৫
শহরের গাছে গাছে ওতপাতা গিরগিটি ছবি: নাজমুল হাসান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গাছের মধ্যখান থেকে উপরিভাগে হঠাৎ লাফ। লম্বা-চওড়া নারিকেল গাছ।

নিচে মানুষের আনাগোনা। কী দেখে যে আচমকা উটকো লাফটি দিয়েছিল তা এবার স্পষ্ট। খপ করে মুখে পুরে নিলো!



নিশানা করা আছে। শুধু মাপ বোঝার চেষ্টা। তবে সময়ের ব্যবধান বেশি নয়।



ওতপাতা গিরগিটি একটা উড়ে এসে জুড়ে বসা পোকাকে নিশানা বানিয়েছিল। সুযোগ বুঝে নিশানা লগ্ন মতো হা করে মুখে পুরতে দেরি হয়নি।



ছোট মুখে বড় পোকা! না, সে সাহস আছে যথেষ্টই। ধীর স্বভাব বজিয়ে রেখে প্রথমে অর্ধেকটা শরীর মুখে ঢুকিয়ে পোকাকে কাবু করার চেষ্টা, এরপর আস্ত শরীরটাকে গিলে ফেলা।



প্রকৃতির বুকে চিঁড় ধরিয়ে প্রতিনিয়তই মানুষ তার কালো ছায়ার বিস্তার ঘটাচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে প্রাণিকুলের আবাস। ধ্বংস হচ্ছে তাদের জীবন-যাত্রা। এতো চোখ রাঙানির পরও শেষ মূহুর্তে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে অতি নিরীহ গিরগিটিটির দেখা পাওয়া গেছে ইট-কাঠের ঢাকাতেই।



জাতীয় প্রেসক্লাবের উঠানের নারিকেল গাছে গিরগিটিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ। সঙ্গে তার সঙ্গীও রয়েছে। একবার গাছে তো অন্যবার স্বর্ণলতার মাঝে। মধ্যদুপুরে খাদ্য খোঁজার জন্য তাদের দারুণ লাফালাফি-ঝাপাঝাপি। জাতীয় প্রেসক্লাব ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন উদ্যান, পার্ক ও বাগানের গাছে গাছে ওতপেতে আছে গিরগিটি। যেন অসহায় হয়ে বেঁচে থাকা!



প্রকৃতির মাঝে এমন প্রকৃতির প্রাণীরা ছড়িয়ে থাকুক, মানুষের কাছাকাছি। এতে দোষ কী তাতে...। মানুষের জন্য এরা ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী। বিভিন্ন পোকা-মাকড় খেয়ে গিরগিটি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে।



এ ধরনের গিরগিটিকে মূলত ‘বাগানের গিরগিটি’ বলা হয়। ইংরেজিতে বলা হয়: Garden Lizard or Changeable Lizard। যার বৈজ্ঞানিক নাম: Calotes Versicolor।



গ্রাম-বাংলায় ‘রক্তচোষা’ নামে অতি পরিচিতি এর। তবে পাক্কা নিরীহ সরীসৃপ এ প্রাণীটি নানা রকম কুসংস্কার ও গাছপালা ধ্বংসের কারণে দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। যা রক্ষা করা দরকার।



এরা গড়ে ৪৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। যার মধ্যে লেজটিই প্রায় ৩০ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার। আর দেহ মাত্র ১২-১৪ সেন্টিমিটার। দেহের ওপরের অংশ বাদামি থেকে ধূসর। তবে এই রং প্রয়োজনের সময় বদলাতে সক্ষম এরা। গিরগিটি হালকা জলপাই বাদামি, জলপাই-ধূসর বা হলদে রং ধারণ করে। পিঠের ওপর ও পাশে কতগুলো ফোঁটা আর দাগ থাকে। দেহের নিচের অংশ ময়লা সাদা। পিঠের ওপর শিরদাঁড়া বরাবর কাঁটা রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ গিরগিটির চোখের নিচের আঁশগুলো কালচে হয়ে থাকে।



রং বদলানোর যে বিষয়টি বলা হলো তা কার্যকর বেশি প্রজননকালে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস গিরগিটির প্রজননকাল। গিরগিটি কীটপতঙ্গভোজী হলেও ডিম, ছোট ছোট কাঁকড়া, বড় পোকা ও অন্যান্য ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণীতেও অরুচি নেই।

সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেরত থেকে বাংলানিউজের চিফ অব ফটো করেসপন্ডেন্ট নাজমুল হাসান দীর্ঘ সময় প্রচেষ্টার পর দুর্লভ ছবিগুলো তার ক্যামেরা বন্দি করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২০২ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৫
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।