ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিরল ধলা শকুন

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তোলা ছবি দু’টি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৫
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তোলা ছবি দু’টি ছবি : সানিয়ার রহমান রাহুল

শ্রীমঙ্গল: পাখির দেশ বাংলাদেশ। নানান রঙের নানান বৈচিত্র্যের পাখিতে ভরপুর আমাদের চারপাশ।

তাদের কলকাকলি গভীর সৌন্দর্য ছড়ায় প্রকৃতির বুকে।
 
কোনো কোনো পাখি আবার আমাদের দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। সারা বছরই ওরা আমাদের দেশে থাকে। ওদের সুলভ আবাসিক পাখি বলা হয়। কোনো কোনো পাখি প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের দেশে অবস্থান করে পৃথিবীর উত্তরের গোলার্ধ্বের দিকে চলে যায়। এমন পাখিদের আমরা পরিযায়ী পাখি বলে থাকি।
 
আবার এমনও কিছু কিছু পাখি রয়েছে যাদের আমাদের দেশে হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায়। হয়তো পাঁচ বছরে একবার! অথবা দশ-পনের বছরে একবার! এমন পাখিকে আমরা অনিয়মিত পাখি বলে থাকি।
 
এসব অনিয়মিত পাখির ছবি ধারণ করা সহজ ব্যাপার নয় মোটেই। ব্যাপারটি অত্যন্ত কষ্ট ও সময়সাপেক্ষ।
 
সম্প্রতি আমাদের দেশে প্রথম তোলা হলো এমনই অনিয়মিত একটি পাখির ছবি। এ পাখিটির নাম ধলা শকুন। এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত দু’টিই ছবিই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তোলা ধলা শকুনের আলোকচিত্র। বন্যপ্রাণি আলোকচিত্রী সামিয়ার রহমান রাহুল অতি বিরল ধলা শকুনের দু’টি ছবি ধারণ করেছেন।
 
এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে সানিয়ার রহমান রাহুল বলেন, আমি গত ১৩ জুন রাঙামাটির কাপ্তাই থেকে ধলা শকুনের এ ছবি দু’টি তুলেছি। আমার জানা মতে, এর আগে কেউ ধলা শকুনের ছবি তোলেননি।
 
ধলা শকুনের অন্যান্য বাংলা নাম সাদা গিদরি, শ্বেত শকুন বা সোয়েট শকুন। ইংরেজি নাম Egyptian Vulture এবং বৈজ্ঞানিক নাম Neophron percnoplerus। এরা বড় আকারের মাংসাশী পাখি। এর দৈর্ঘ্য ৬১ সেমি পর্যন্ত হয়। শরীরের বেশিভাগ অংশ সাদা বা ধলা বলে ওদের নামকরণ করা হয়েছে ধলা শকুন হিসেবে।
 
পাখি গবেষক, লেখক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, রাহুলই বাংলাদেশে ধলা শকুনের প্রথম ছবি তুলেছেন। আমাদের দেশে আমি অনেক আগে এই পাখিটিকে দেখেছিলাম। কিন্তু ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
 
ছবি ধারণ না করার কারণ হলো, আমরা তখন পাখির ছবি তুলতাম না। পাখি দেখতাম শুধু। তখন বার্ড ফটোগ্রাফি এতো কমনও ছিল না। পরবর্তীতে আমরা যখন সিরিয়াসলি পাখির ছবি তোলা শুরু করি তখন এই পাখিটিকে আর পাওয়া যায়নি।
 
তিনি আরো বলেন, এটি পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন প্রজাতির একটি পাখি। শুধু ধলা শকুনই নয়, আমাদের দেশের স্থায়ী বাসিন্দা বাংলা শকুনসহ সব প্রজাতির শকুনই আজ বিপন্ন। পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম নামক বিষাক্ত ওষুধটি ব্যবহারের ফলে ওষুধ খাওয়ানো সেই গবাদি পশুর মৃতদেহ খেয়ে শকুনরাও বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে।  
 
ইনাম আল হক আরো বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ডাইক্লোফেনাককে শকুন বিলুপ্তির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে ডাইক্লোফেনাকের মতো প্রায় সমান ক্ষতিকর ওষুধ হিসেবে কিটোপ্রোফেনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। অবশ্য সরকার এগুলোকে নিষিদ্ধ করার পর এখন পরিস্থিতি অনেকটা আশাপ্রদ।
 
শকুন রক্ষা সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আইইউসিএনের যৌথ উদ্যোগে শকুনের নিরাপদ এলাকা চিহ্নিত করে এদের সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এর ফলে গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। বাংলা শকুনরা যে হারে মরে যাচ্ছিল, সেটা কিছুটা কমেছে।

তিনি জানান, এদের শ’খানেক ছানা তৈরি করে রাখা হয়েছে। কিছুদিন পরই তাদের প্রকৃতির মাঝে অবমুক্ত করা হবে। এছাড়াও ভারত, নেপাল ইত্যাদি দেশের প্রজনন কেন্দ্রেও বেশ কিছু শকুনের ছানা জন্ম নিয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৫
বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।