নেপাল থেকে ফিরে: সব খাঁচার মধ্যে মানানসই গাছ। পরিবেশটাই বন্য করে তোলা হয়েছে।
বলছিলাম নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর চিড়িয়াখানার কথা। আয়তনে কম হলেও খুবই পরিপাটি করে সাজানো। প্রধান ফটক পেরুলে সামনে পড়বে বিশাল লেক। আর লেকের চারিদিকে বিভিন্ন প্রাণির আবাস। প্রথম ধাপেই হরিণের ডেরা।
সম্ভবত শতক তিনেক হবে খাঁচাটির আয়তন। কিন্তু দারুণ সাজানো গোছানো। লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা। গ্রিল ঘেঁষে ৩ ফুট চওড়া করে লাগানো হয়েছে নানান জাতের পাতাবাহারের গাছ। অন্যদিকে ভেতরে বিভিন্ন বৃক্ষের সমারোহ। হরিণের পায়ে পিষ্ট হয়ে যাতে বন্য পরিবেশ নষ্ট না হয় সে জন্য খাঁচার ভেতরেই নেট দিয়ে খানিকটা সড়ক দ্বীপের মতো তৈরি করা হয়েছে। যা বাহারী বৃক্ষে ভরা।
এরপর আরও কয়েকটি খাঁচা দেখার পর টিভি রিপোর্টার জুলহাস কবীর বলে উঠলেন, এটাই প্রকৃত চিড়িয়াখানা। আমাদেরগুলো তো চিড়িয়াখাঁচা। প্রাণীগুলোকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। বন্দি জীবন থেকে বাঁচতে সেগুলোর অবিরাম প্রচেষ্টা দেখা যায়। কখনও কখনও উদাস ভঙ্গিতে তাদের চেয়ে থাকা দেখলে বুকের মধ্যে কেমন হুহু করে ওঠে।
সহযাত্রী হাসনাত রাব্বি বলে উঠলেন, মিরপুর চিড়িয়াখানায় হরিণের খাঁচার সামনে যান, কি দেখতে পাবেন। একটি কি দু’টি বড় গাছ রয়েছে ভেতরে। পুরো মাঠ ধুধু বালু চর। মনে হবে মরুভূমির আবহ তৈরি করা হয়েছে। যেন মরুভূমির প্রাণী হরিণ, যে কারণে এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
হরিণের খাঁচা দেখলে ছোটদের মধ্যে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রাণীগুলো পুরোপুরি নি:সঙ্গ। মানুষ গেলেই ছুটে আসে কাছে। ওদের এই ছুটে আসা উদ্ধারের আশায় না-কি ক্ষুধার তাড়নায় বুঝা মুশকিল।
চলতি পথে কথার সঙ্গে তুলনা চলতে থাকে মিরপুর চিড়িয়াখানার সঙ্গে। আমরাও দেখতে দেখতে এগুতে থাকি। শুধু বিস্মিত হওয়ার পালা। পাখির খাঁচাগুলো দেখে বিস্ময় আরও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। খাঁচার ফাঁক গলে অনেক গাছ বেরিয়ে গেছে আকাশ পানে। আবার কোনটির শাখা বাইরে এসে দর্শনার্থীর মাথা ছুঁয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেন আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো।
প্রত্যেকটি খাঁচার মধ্যে নানান জাতের গাছ। সেগুলোতে ফল পেকে রসে টইটুম্বুর হয়ে আছে। আর খাঁচার ভেতর থাকা পাখিগুলো আপন মনে ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে সেই ফল। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। কে এলো-গেলো সেদিকে যেনো কোন খেয়ালই নেই তাদের।
‘চুকার পার্টিজ’র খাঁচার সামনে গিয়ে চোখ আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা। খাঁচাটির মধ্যে অনেকগুলো অশ্বগন্ধা। যেগুলোতে পাকা ফল বর্ণিল করে তুলেছে পুরো খাঁচাকে। সেই ফলগুলো টুকে টুকে খাচ্ছে খাঁচায় বন্দি পাখিরা। যেনো বনেই রয়েছে তারা।
এর পাশাপাশি কয়েকটি খাঁচায় রয়েছে কয়েক ধরনের গোল্ডেন ফেসেন্ট। খাঁচাগুলোর ভেতরে রয়েছে অশ্বগন্ধাসহ বিভিন্ন জাতের গাছ। পাখিগুলো না-কি গাছের গুঁড়ির মধ্যে থাকে। তাই একটি পুরনো গাছ ফেলে রাখা হয়েছে। যাতে রয়েছে অনেকগুলো গর্ত। এসব গর্তে আপন মনে খেলছে পাখিগুলো।
কাঁঠ বিড়ালীর খাঁচাটি পুরোপুরি আটকানো। এই খাঁচায় সপ্তাহে দু’দিন গাছের সতেজ ডাল কেটে এনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আর তাতে সারাদিন খেলা করে কাঁঠ বিড়ালীগুলো। পাতাগুলো মরে গেলেই সরিয়ে আবার সতেজ ডাল দেওয়া হয়।
পুরো চিড়িয়াখানার মধ্যে কোথাও কোন খাবারের দোকান নেই। ভেতরে খাবার নিয়ে প্রবেশ করাও নিষেধ। চোখে পড়ল না কোন ফেরিওয়ালাকে। যে কারণে ভেতরে নেই যত্রতত্র চিপস ও বিস্কুটের প্যাকেটের গড়াগড়ি। শুধু তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এককোণে বেশ কয়েকটি পানির কল।
কিন্তু ঢাকা চিড়িয়াখানায় ভেতরে ঢুকলে মনে হবে যেনো কোন ফাস্টফুডের বাজার। আর শতশত বাদাম-বুট, শশা ও চিপস বিক্রেতা। পলিথিন ও বিস্কুটের খালি প্যাকেটগুলো বাতাসের সঙ্গে গিয়ে দুষিত করছে লেকের পানি।
১৯৬৪ সালে মিরপুর চিড়িয়াখানা স্থাপিত হয়। এর আয়তন হচ্ছে ৭৫ হেক্টর। আর নেপালের কেন্দ্রীয় ওই কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার আয়তন মাত্র ৬ হেক্টর। মিরপুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে ১৯১ প্রজাতির প্রাণী। আর নেপালের ওই চিড়িয়াখানায় রয়েছে মাত্র ১০৮ প্রজাতির প্রাণী।
কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই বারবার ছুটে আসেন এখানে। কিন্তু মিরপুর চিড়িয়াখানা....।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
এসআই/জেডএম