ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

হেমন্তের প্রতিটি সকালই শ্রেষ্ঠ

বিশ্বজি‍ৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
হেমন্তের প্রতিটি সকালই শ্রেষ্ঠ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু। ’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এ লাইনে গাঢ় সবুজ ধানের ক্ষেতে বিন্দু বিন্দু রূপালি শিশিরের ওপর ভোরের সোনালি রোদের মনোরম সৌন্দর্য দেখার আহ্বান ধরা পড়ে।



সে আহ্বানেই মায়াময় স্নিগ্ধরূপ নিয়ে এসেছে হেমন্তের সকাল। সকালের প্রথম রোদের বর্ণচ্ছটায় গাছের পাতাগুলো খিলখিল করে হেসে ওঠে। ঝলমল করে ওঠে। তখনই হালকা শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

দৃষ্টিসীমা যতোদূর গিয়ে পৌঁছে দেখা যায়, আলোকজ্জ্বল অপূর্ব একটি সকাল তার অভাবনীয় সৌন্দর্য নিয়ে যেন অপেক্ষমান। গাছেদের নরম-কচি পাতাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে মিষ্টি রোদ আর সুনীল আকাশ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রকৃতির মাঝে এভাবে সৌন্দর্য ফুটে ওঠার ছবিটি দৃশ্যমান হয়ে থাকে বলেই বোধ হয় দৃশ্যময়তার বিবেচনায় হেমন্তের প্রতিটি সকালই শ্রেষ্ঠ।

ধানের শীষে, ঘাসের বুকে, পাতার শরীরে শিশির জমে থাকার গভীর সৌন্দর্যের পটভূমি তুলে ধরে বলেই প্রতিটি হেমন্তের সকালের রয়েছে নিজস্বতা। প্রকৃতি এমন একটি অভাবনীয় রৌদ্রোজ্জ্বল হেমন্তের সকালের রূপ আমাদের সামনে তুলে ধরে যেন সফলতার চিত্রই উপহার দিচ্ছে।

জীবনযাপনের যন্ত্রণাকাতর দীর্ঘ পটভূমি পেরিয়ে এমনই একটি আলোকময় চিরসুন্দর সকালের অনুপ্রেরণাই যেন কাম্য আমাদের। আমাদের আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে সত্য ও সুন্দরের অনুভূতি নিয়ে কর্তব্য-কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ার সংকল্প যেন প্রকাশ করছে সকালটি। প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্যাবলীর সমন্বয়ে গাঁথা হেমন্তকালের প্রতিটি সকাল বেলাকার রূপ।  

ষড়ঋতুর হিসাবে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দু’মাস হেমন্ত কাল। হেমন্ত মানেই শিশিরস্নাত প্রহর। এ সময় সোনালী ফসলে ভরা থাকে মাঠ-ঘাট। হালকা শীতের হাওয়ার দোলায় বন-বনানীর হৃদয় জুড়ে নামে মৃদু কাঁপন। ঘাসে, গাছের পাতায়, ঘরের চালে শিশির ঝরিয়ে শীতের সূচনা করে হেমন্ত। সত্যিকার নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের মূল পরিচয়টাই যেন বাংলার প্রকৃতিতে মূর্ত হয়ে ওঠে এ ঋতুতেই। হেমন্তের রূপালি শিশির বিন্দু জমতে শুরু করেছে গাছের পাতায় পাতায় আর মাঠভরা সবুজ-হলুদ ধানের শীষে।

ধান উ‍ৎপাদনের ঋতু হেমন্ত ছিল বলেই এক সময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধানে পাক ধরে। কার্তিকের শেষ দিকে তাই গ্রামের মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। অগ্রহায়ণে সেই কাটা ধান মাড়াই করা হয়। এরপর শুরু হয় নবান্নের আয়োজন। ক্ষীর-পায়েসের সঙ্গে চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় চিতই, পাটিসাপটা, পুলি, কুলসিসহ হরেক রকমের পিঠা।

আমরা তো ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছি প্রকৃতির গভীর সান্নিধ্য থেকে। উপলব্ধির চেতনায়ও এখন আর ধরা পড়ে না প্রকৃতির সুনিবিড় দৃশ্যপটগুলোর তাৎপর্য। ছয় ‍ঋতু বাংলার প্রকৃতির বুকে যে গভীর সৌন্দর্য শোভা ছড়িয়ে রখেছে- তাও যেন হৃদয় দিয়ে দেখার ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।