ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

সন্ধি কচ্ছপের দুঃসময়

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়নরমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৫
সন্ধি কচ্ছপের দুঃসময় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): শীত মৌসুমে একটু একটু করে শুকাতে শুরু করেছে বিল-খালসহ বিভিন্ন জলাশয়। কেউ আবার পানি সেচে জলাশয়গুলো শুকিয়ে ফেলছেন মাছ ধরতে।

এতে এসব জলাশয়ে বসবাসকারী সন্ধি কচ্ছপগুলোও ধরা পড়ছে মাছের সঙ্গে।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি আইনে বিপন্ন তালিকায় থাকা এ কচ্ছপগুলো ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ। তারপরও এক শ্রেণীর মৎস্যজীবী অধিক টাকার লোভে তা ধরে লুকিয়ে বিক্রি করছেন। একেকটি কচ্ছপ বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে হাজার টাকায়।

সন্ধি কচ্ছপ মিঠা পানির প্রাণী । এর ইংরেজি নাম Indian Flapshell Turtle এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lissemys punctata। এক সময় এরা আমাদের প্রতিটি হাওর-বিল-জলাশয়ে প্রচুর সংখ্যক ছিল। কিন্তু বর্তমানে এরা অনেকটাই বিপন্ন। তবে এখনো কিছু কিছু প্রাকৃতিক হাওর-জলাশয়ে এরা টিকে আছে।

শীত মৌসুম ধীরগতিসম্পন্ন এ প্রাণিটির জন্য বড়ই দুঃসময়। কেননা তখনই তাদের ধরা পাড়ার সময়। জলাশয়ের পানি শুকিয়ে গেলে কাদার ভেতর লুকিয়ে থাকলেও কৌশলে তীক্ষ্ম লৌহদণ্ড দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের আহত করে ধরা হয়।  

কীভাবে শীতমৌসুমে এ বিপন্ন কচ্ছপগুলোকে রক্ষা করা সম্ভব হবে? এ প্রশ্নে সরীসৃপ গবেষক শাহরীয়ার সিজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‌আসলে কচ্ছপ বিক্রেতাদের ধরে জেল-জরিমানা করে এসব কচ্ছপের ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করা যাবে না। শর্তানুসারে কচ্ছপ বিক্রেতাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। অর্থাৎ, একটি কচ্ছপ বিক্রি করে তার যা আয় করে, তারচেয়ে বেশি টাকা তাকে দিলে তারা সেই পেশার প্রতি নিরুৎসাহিত হবে।

শাহরীয়ার সিজার বলেন, এলাকাভিত্তিক জরিপ করে আগে কচ্ছপ বিক্রেতাদের শনাক্ত করতে হবে। তারপর তাদের নিয়ে কাউন্সিলিং বা কর্মশালার মাধ্যমে সচেতনা তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। সবশেষে একালাভিত্তিক সমন্বিত একটি দল বা গ্রুপ তৈরি করে তাদের দিয়ে এলাকার ওইসব কচ্ছপদের সংরক্ষণ করাতে হবে। বিনিময়ে তাদের মাসিক মুনাফা দেওয়া যেতে পারে। অথবা অন্য কোনো শর্তাবলী। একটি কচ্ছপ বিক্রির পরিবর্তে তাদের অধিক মুনাফা দিলে তারা স্বাভাবিকভাবেই এ কাজ থেকে বিরত থাকবে।    

একটি দৃষ্টান্ত টেনে শাহরীয়ার সিজার বলেন, ইকো-গর্ডিয়ান প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে প্রায় আট প্রজাতির পাহাড়ি কচ্ছপ রক্ষায় এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। যেসব নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী আগে পাহাড়ি কচ্ছপগুলো ধরে ধরে খেতেন; এখন তারা সেই কচ্ছপগুলোকে সংরক্ষণ করছেন। আমাদের ইকো-গর্ডিয়ান প্রোগ্রাম সফলতার মুখ দেখছে। এ কার্যক্রম সিলেটসহ দেশের অন্য জলাশয়গুলোতে হাতে নেওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।