ঢাকা: আর মাত্র দুই দিন বাকি, ৩০ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার ২১তম অধিবেশন। ১৯৯৭ সালে জাপানের কিয়োটায় অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের পর এবারের ‘প্যারিস কপ-২১’ কে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ মনে করছেন বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
এবারের সম্মেলনে ১৪৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের পর এ সম্মেলনকে এবার সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
কিয়োটা প্রটোকল বাস্তবায়নে এবারের সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলো গুরুত্ব পূর্ণ প্যারিসে প্রোটোকল সাক্ষর করতে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্র প্রধানরা ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ৮৭ ভাগ কমানোর জন্য অঙ্গীকার করবেন। যার বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২০ সাল থেকে।
এবারের সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সবগুলো রাষ্ট্র একজোট হয়ে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে এবং তাদের সম্মিলত অংশগ্রহণ ও ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে।
প্যারিস সম্মেলন উপলক্ষে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বখ্যাত ৩৬০টি কোম্পানির সিইও, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিন পাওয়ার কর্তৃপক্ষ, ৬টি বিশ্বখ্যাত ব্যাংক, বেভারেজ কোম্পানির সিইও এবং ৪শ’ জন গ্লোবাল বিনিয়োগকারী মনে করেন, কেবল বর্তমান অবস্থা থেকে জলবায়ু বান্ধব শিল্পে রূপান্তরে কমপক্ষে ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর।
বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা জানাচ্ছে, ৩০ নভেম্বর সকাল ১০টায় ফরাসী প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রিত ১৪৭ রাষ্ট্র প্রধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের অংশ গ্রহণে ‘লিডারস ইভেন্ট’ এর মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। সকাল ১০টায় শুরু হবে সাধারণ অধিবেশনগুলো। যা ১১ ডিসেম্বরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হবে।
লিডারস ইভেন্ট পরিচালনা করবেন ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট ফেবিয়াস। এর সভাপতিত্বে থাকবেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ওঁলাদ। তিনি রাষ্ট্র প্রধানদের উদ্দেশ্যে পৃথিবীকে বাস উপোযোগী করা এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর পাশে দাঁড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি যত্নশীল ও দায়িত্ববান হওয়ার আহ্বান জানাবেন।
আয়োজক কমিটি জানাচ্ছে, এবারের সম্মেলনে ১৯৭টি দেশের সাড়ে পাঁচ হাজার সংবাদকর্মী, ৬ হাজার এনজিও কর্মী এবং ৫ হাজার নেগোশিয়েটর, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা, নারী নেত্রী, মানবাধিকার কর্মী, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকার ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা অংশ নেবেন।
সন্ত্রাসী হামলায় নাজেহাল ও বিপর্যস্ত ফ্রান্সে এবারের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে সন্ত্রাসীদের ভয় না পেয়ে বিশ্ব নেতাদের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে সে অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে যায়। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে প্যারিস সম্মেলনকে নতুন মাত্রা দেবে, মনে করছে আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম। রাষ্ট্রনেতারা পরস্পর সাক্ষাতের মাধ্যমে যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশ গ্রহণের কথা থাকলেও তিনি তা বাতিল করেছেন। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
বাংলাদেশ এবারের সম্মেলনে ৭০ জাতির এলডিসি সভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্টগুলোর স্বার্থরক্ষার দায় তাই বাংলাদেশের।
এ বিষয়ে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে এ হুমকি মোকাবেলায় নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে দেওয়া উন্নত রাষ্ট্রের টাকা ঋণ নয়, অনুদান হিসেবে দেওয়ার অনড় দাবি জানাবে এলডিসি সভাপতি বাংলাদেশ।
অন্য দিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ক্ষতিপূরণ আদায় এবং দাবি বাস্তবায়নে সোচ্চার থাকতে হবে গণমাধ্যমকেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
আরএম/এটি