গাজীপুর: গাজীপুরে শিল্প কারখানার দূষিত তরল বর্জ্যে ধ্বংস হচ্ছে তুরাগ নদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। শূন্য হয়ে যাচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণী।
গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, চান্দনা চৌরাস্তা, টঙ্গী, হোতাপাড়া, মনিপুর, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে শতশত শিল্পকারখানা। এসব কারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদে। এতে তুরাগ নদের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে মাছসহ জলজ প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ।
কয়েক বছর আগেও গাজীপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ নদের পানি লাখ লাখ মানুষ ব্যবহার করতো। গোসল, কাপড় কাচা, রান্নাসহ কৃষিকাজে তুরাগ নদের পানি ব্যবহার করতো মানুষ। নদের পানিতে বিচরণ করতো হাঁস, মাছসহ নানা প্রকার বিভিন্ন জলজ প্রাণী।
কিন্তু কিছু লোভী শিল্পপতি ব্যবসায়ীর অসচেতনতার কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তুরাগ নদের পরিবেশ। এ সব শিল্পপতি ব্যবসায়ীরা শিল্প কারখানার দূষিত বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি ফেলছে তুরাগ নদে। দূষিত বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার কারণে কোন ধরণের জলজ প্রাণী এখন আর দেখা যায় না তুরাগ নদে। পানি বিষাক্ত হওয়ায় জন্মাচ্ছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ নানা ধরনের মশা। বর্ষাকালে তুরাগ নদে বেশি পানি ও স্রোত থাকায় প্রায় চার মাস এ নদের পানি মানুষ কিছুটা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু শুকনা মৌসুমে শিল্প কারখানার দূষিত পানির দুর্গন্ধে তুরাগ নদের পার দিয়েও হেঁটে যাওয়া যায় না। আগে তুরাগ নদের আশপাশের লোকজন চলাচল করতো নৌকা দিয়ে। কিন্তু দুর্গন্ধ দূষিত পানির কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তুরাগ নদে নৌকার চলাচল। তুরাগ নদের পানি স্পর্শ করলে চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
এছাড়া দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন। কিন্তু দূষিত বর্জে্যর কারণে বিষাক্ত তুরাগ নদের পানি ব্যবহার করতে পারে ইজতেমায় আসা লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। এ রকম চলতে থাকলে এক সময় তুরাগ নদ পরিণত হবে নর্দমায়।
এ অবস্থায় তুরাগ নদের সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ আগের মতো ফিরে পাওয়ার দাবি তুরাগ পারে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষের।
তুরাগ পারের বাসিন্দা মো. আফাজ উদ্দিন জানান, ‘আমরা আগে তুরাগ নদের সাঁতার কাটতাম ও গোসল করতাম এখন তুরাগ নদের পারে যাওয়া যায় না শিল্পকারখানার দুষিত বর্জে্যর গন্ধে। এ পানি শরীরে লাগলে শরীরে ফোসা পড়ে চামড়া উঠে যায়। এ পানিতে মশা মাছি বিস্তার লাভ করছে। আর ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের। ’
কৃষক মো. আসাদুল ইসলাম জানান, তুরাগ নদের পানি দূষিত হওয়ায় কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায় না। ধানসহ নানা ধরনের শাকসবজির পাতা হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় ধান ক্ষেত ও শাকসবজি নষ্ট হয়ে যায়। ফসলের জমিতে পানি দিতে অনেক কষ্ট করতে হয় আমাদের।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান বলেন, তুরাগ নদের দূষিত পানি ব্যবহার করলে মানুষের চর্মরোগ, জন্ডিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়ারসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। এ ধরণের দূষিত পানি থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোনিয়া সুলতানা জানান, যেসব শিল্প কারখানা শোধনাগার (ইটিপি) ছাড়া কারখানা পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে ইটিপি ছাড়া নতুন করে যে সব শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে ওইসব কারখানাকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। তুরাগ নদের পরিবেশ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শিল্প কারখানার মালিক ও এলাকাবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
আরআই