ঢাকা: বহুল আলোচিত এবারের প্যারিস কপ-২১ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে জাতিসংঘ। যদিও গত বছর পেরুর রাজধানী লিমায় অনুষ্ঠিত কপ-২০’তে ‘লিমা টু প্যারিস অ্যাকশন এজেন্ডা’র অধীনে জাতিসংঘের সদস্য ১৯৬ রাষ্ট্রেরই এবার একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
যার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানোর জন্য গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ৯০ ভাগ হ্রাসের করার কথা রয়েছে।
সম্মেলন উপলক্ষে জাতিসংঘ তার ওয়েব সাইটে জানাচ্ছে, প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সংকট মোকাবেলার জন্য কোনো জাদুর চেরাগ নেই। ঘটনা এমন নয় যে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর চুক্তি স্বাক্ষর মানেই সংকটের সমাধান। এটা কোনো শেষ পদক্ষেপও নয়। এর সফলতা নির্ভর করছে, প্যারিস সমঝোতা স্বাক্ষর করা রাষ্ট্রগুলোর তাদের জমা দেওয়া কপ-২১ এজেন্ডার আক্ষরিক বাস্তবায়নের ওপর। যার মূল কথা হলো, সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন ৯০ ভাগ কমাতে হবে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাসে ভূমিকা রাখতে হবে।
আর এ জন্যই চূড়ান্ত চুক্তি সাক্ষরের আগে এক জরুরি বৈঠক ডেকেছেন জাতিসংঘ মাহসচিব বান বি মুন। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ কমিটির সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবেন তিনি। সম্মেলন শুরুর দিন ৩০ নভেম্বর প্যারিস সময় দুপুর পৌনে ৩টায় সম্মেলন শুরু হবে।
মহাসচিবের এ জরুরি বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন পেরুর প্রেসিডেন্ট ওলান্টা হাসালা টেসো, মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ সি সি, এঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট জোসে এডোরা ডস স্যান্টোস, জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী ফার্নান্ডেল স্টুয়ার্ট, সামোয়ার প্রধানমন্ত্রী তুলিপা লুপেসুলাই নেতো আইনে সেলেলে মেলোগোয়াই, জেনেভা অ্যাসোশিয়েশনের চেয়ারম্যান মাইক ম্যাক জেভিক ও জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রধান জিয়োনা ডি সিলভা।
জাতিসংঘ বলছে, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সংকট মোকাবেলার কোনো জাদুর চেরাগ প্যারিস নগরীতে নেই। কারণ বিষয়টি সারা বিশ্বকে এক জটিল সমীকরণের মুখে দাঁড় করিয়েছে। তবে এটা মোকাবেলায় অবশ্যই বিশ্বকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে ২১ শতকে এর চেয়ে আর কোনো বড় ও কঠিন সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।
তবে সংকট মোকাবেলায় আলোর দিশাও দেখাচ্ছে জাতিসংঘ। তাদের হিসাবে, ইতোমধ্যে সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসছে রাষ্ট্রগুলো। কেবল সরকারি পর্যায়েই নয়, সিভিল সোসাইটি, এনজিও, বহুজাতিক কোম্পানি, বিনিয়োগকারী, নগর পিতা, পরিকল্পনাবিদ, বৈজ্ঞানিক, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ সবাইকে সংকট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী একই ছাতার নিচেয় আসতে হবে, যা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
প্যারিস ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সম্পর্কে জাতিসংঘ বলছে, কোনো বৈশ্বিক সংকটই একটি ‘গ্লোবাল এগ্রিমেন্ট’ ছাড়া মোকাবেলা করা যায় না। তাই প্যারিস সম্মেলন জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে। এই চুক্তি অবশ্যই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর ওপর একটি নৈতিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে।
সংস্থাটি মনে করছে, চূড়ান্ত চুক্তি সাক্ষরের আগে ১৫০ দেশের জমা দেওয়া এজেন্ডায় অবশ্যই একটি বিষয় যোগ করতে হবে। তাহলো, এ সংকট মোকাবেলায় অবশ্যই একটি গ্রহণযোগ্য আর্থিক প্যাকেজ অর্ন্তভুক্ত করা। কারণ সংকট মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রয়োজন বৈশ্বিক সহযোগিতা, অর্থ ও প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে তারা ‘লো কার্বন’ প্রযুক্তির পথে যাত্রা করতে পারে। উন্নত দেশগুলোর উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই যাত্রায় বিনা শর্তে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এজন্য তাদের ২০২০ সাল থেকেই প্রতিবছর ১শ’ কোটি বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে উন্নয়নশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পেছনে। তবে আজ থেকে সে পর্যন্ত অবশ্যই এই অর্থ খরচের সঠিক খাত ও পদ্ধতি ঠিক করতে হবে।
যদিও প্যারিস সম্মেলনে বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হবে বলে মনে করে জাতিসংঘ। ৩০ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠেয় এবারের সম্মেলনে যোগ দিতে ইতোমধ্যে ৪৫ হাজার অংশগ্রহণকারী নাম লিখিয়েছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার কাজ থেকে মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুমতি পত্র পেয়েছেন ২০ হাজার জন। বাকিরা সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরের সাইড প্রোগ্রামগুলোয় অংশ নেবেন।
এবারের সম্মেলনে ১৪৭ রাষ্ট্র প্রধানের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটবে। আগামী ২০১৬ সালে মরোক্কোয় কপ ২২ অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
আরএম/এটি
** বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে ইইউ প্রতিনিধি
** দৃষ্টি এখন প্যারিসে
** একমত হবেন কি বিশ্ব নেতারা?
** বিশ্ব নেতারা প্যারিসে