ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

জাবিতে দেশের প্রথম প্রজাপতি পার্ক

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
জাবিতে দেশের প্রথম প্রজাপতি পার্ক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: অপূর্ব সুন্দর আমাদের বাংলার প্রকৃতি। এখানে জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে রয়েছে ডানাওয়ালা পতঙ্গ।

সৌন্দর্যের দিক থেকে এই পতঙ্গগুলোর সর্বাগ্রে বর্ণিল প্রজাপতি।

প্রজাপতি একাধারে আমাদের বাস্তুতন্ত্রকে যেমন সচল রেখেছে, তেমনি বাড়িয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনিন্দ্য প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের আধার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বর্ণিল প্রজাপতির ওড়াউড়ি যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েক গুণ। তাই প্রজাপতির মতো অসাধারণ একটি প্রাণিবৈচিত্র্য সংরক্ষণের তাগিদ অনুভব করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন। সেই তাগিদ থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের প্রথম ‘প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র’।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে এ পার্কটি।

বিলুপ্তপ্রায় প্রজাপতিগুলো সংরক্ষণ ও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এদের বংশবৃদ্ধির জন্য প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্রটি কাজ করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পাশে প্রায় তিন একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই পার্ক ও গবেষণাকেন্দ্র।

সরেজমিনে পার্কে গিয়ে দেখা যায়, প্রজাপতি দর্শনের জন্য সেখানে ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের তিনটি ‘প্রজাপতি হাট' বানানো হয়েছে। হাটের চারদিক নেট দিয়ে ঘিরে দেওয়ার জন্য কাজ করছেন কয়েকজন কর্মচারী। ভিতরে অধ্যাপক মনোয়ারের নির্দেশনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছেন।

অধ্যাপক মনোয়ার বলেন, প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্রের জন্য প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। সে অর্থ দিয়ে আমরা পার্ক নির্মাণ করেছি। এখন গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু অর্থ না থাকায় এই মুহূর্তে গবেষণাকেন্দ্রটি নির্মাণ করতে পারছি না। গবেষণাকেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা প্রয়োজন।

প্রজাপতি পার্কের পরিকল্পনায় রয়েছে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র। এখানে পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাপতির নিষেকের জন্য জালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রজাপতি ডিম দিলে সেগুলো থেকে বাচ্চা উৎপাদন করা হবে।

সাধারণত ‘হোস্টপ্ল্যান্ট বা পোষক উদ্ভিদ' পদ্ধতিতে প্রজাপতির বংশবিস্তার করে। এই পদ্ধতিতে প্রজাপতি প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্দিষ্ট কিছু গাছে ডিম দেয়। এ সমস্ত গাছ নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকায় তৈরি করা হবে হোস্টপ্ল্যান্ট। ‘কুমারী লতা’, ‘ঝুমকো লতা’ ও ‘আঙুর লতা’র মতো গুল্ম প্রজাতির নানা ধরনের প্রায় ৮০ প্রজাতির গাছে প্রজাপতি বসে ডিম দেয়।

পার্কটিতে এসব গাছ লাগানো হচ্ছে। প্রজাপতি লালন-পালন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য থাকবে রিয়ারিংরুম। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য থাকবে কৃত্রিম লেক ও ঝরনা। প্রজাপতির ফিডিং জোন বা খাবার এলাকা হিসেবে নির্দিষ্ট জায়গায় দেওয়া হবে উন্মুক্ত খাবার। বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলের গাছ লাগানো হবে সে স্থানে।

এছাড়া আরও থাকবে প্রজাপতি জাদুঘর। যেখানে দেশি-বিদেশি প্রজাতির প্রজাপতির মমি, ছবি সংরক্ষণ করা হবে। এখানে গবেষণার মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রজাতি সম্পর্কে তরুণ প্রজন্ম জানতে পারবে। পার্কে আরও থাকবে বৃক্ষ পরিচিতি। কোন কোন গাছে প্রজাপতি বসে, কোন গাছে প্রজাপতি বংশ বিস্তার করে, ডিম দেয় সে সব বৃক্ষকে চিহ্নিত করে কার্ডে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলাকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের জন্য পার্কটি উন্মুক্ত থাকবে। বাইরের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে পার্কে প্রবেশ করতে পারবেন।

অধ্যাপক মনোয়ার ১৯৯৬ সালে এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও সভাপতি। ১৯৯৯ সালে তিনি জাপানে প্রজাপতির কালার ভিশন, বর্ণ ও মথ নিয়ে গবেষণা করেন। ২০০১ সালে দেশে ফিরে এসেই প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তার তত্ত্বাবধানেই ১৭ জন তরুণ গবেষকের সহযোগিতায় গত ১৯ বছরে ৭০টি প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত হয়েছে।

প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে তার তত্ত্বাবধানে ২০১০ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রথমবারের মতো প্রজাপতি মেলা-২০১০ আয়োজন করে। আগামী শুক্রবার ৬ষ্ঠ বারের মতো এই মেলা আবারো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।