ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

পাখি দেখতে বাইক্কা বিলে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬
পাখি দেখতে বাইক্কা বিলে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রকৃতি ভালো থাকলে ভালো থাকে পাখিরাও। প্রকৃতি বিনষ্ট হলে বিপন্ন হয় তাদের জীবন।

পরস্পরের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা আর মায়া-মমতার ডোরে বাঁধা এরা।

কিন্তু আমাদের প্রকৃতি কী আজ সুস্থ? প্রকৃতিকে সুস্থ রাখার প্রক্রিয়াগুলো কী সফল? এমন নানা প্রশ্ন মনের দেখা দিয়েছে বাইক্কা বিলে এসে!

হাইল হাওর সংলগ্ন জলাভূমিগুলো ক্রমশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। একটু একটু করে প্রাকৃতিক এ জলাভূমিগুলোতে গড়ে উঠছে মাছের কৃত্রিম খামার।

এদিকে, প্রায় দুপুর হয়ে এলেও হাইল হাওরের প্রকৃতি থেকে মুছে যায়নি কুয়াশার চাদর। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের সারিদের সে যেন ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখেছে!

বাইক্কা বিলে পাখি দেখতে এসে বড় আশ্চর্যভাবে মাছের কৃত্রিম খামারগুলো দেখা হয়ে যায়! এই সেদিনও তা-ই ঘটলো। মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে ওয়েটল্যান্ড ওয়াক (জলাভূমি ভ্রমণ) কার্যক্রমে অংশ নিতে এসে।

পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি ধীরে ধীরে। হঠাৎই মনে পড়ে গেলো প্রয়াত মিরাশ ভাইয়ের কথা। এ বাইক্কা বিলের অভিভাবক ছিলেন যিনি। এখানে রিপোটিং এর কাজে এলে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে যেতেন।

তার কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই আবেগে ভর করে এগিয়ে আসা দু-ফোঁটা অশ্রু যেন মাটি স্পর্শ করতে চাইলো! 

দূরবীক্ষণ যন্ত্র চোখ নিয়ে দেখলাম পাখিগুলো দলবেঁধে বসে রয়েছে। কেউ কেউ আবার একত্রিত ডানা মেলে ধরেছে বিলের অন্যপ্রান্তে। স্বর্গীয় এ নির্জনতার মাঝে নানা পাখিদের নানা ডাক! মনকিছুতেই সরে যেতে চায় না!

সংঘবদ্ধ শিক্ষার্থীদের পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আগমন বাইক্কা বিলের ইকোসিস্টেমকে কিছুটা বিপন্ন করে তুললো! না! দেখার কেউ নেই! 

ধলা হাঁসে (Cotton Pygmy-goose) আটকে গেল আমার চোখ। শরীরের সাদা-কালো রঙের সৌন্দর্য আর সংখ্যা কিছুটা বেশি থাকার ফলে সবুজ জলজ উদ্ভিদের মধ্যে এরা সহজে চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। এরা গৃহপালিত হাঁসের চেয়ে ছোট। উচ্চতায় ৩০-৩৭ সিমি এবং ওজন ২৫০ গ্রাম। আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি এরা।

পর্যটকরাও এ দূরবীনে চোখ রেখে দেখতে পারবেন বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী ‍পাখি। বিলের কিনারজুড়ে লাগানো হিজল-কড়স গাছের ছায়াঘেরা সারি সন্ধ্যা গড়াতেই মুখর হয়ে ওঠে পাখির কলরবে। এটা সত্যি উপভোগ্য।

প্রতি বছরের মতো এবারও ২২ ও ২৩ জানুয়ারি বাইক্কা বিল পাখিশুমারি অর্থাৎ পাখি গণনা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। এ বছর বাইক্কা বিলে ৩৮ প্রজাতির মোট ৮ হাজার ৮৩২টি পাখি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১৬ প্রজাতির পরিযায়ী ও ২২ প্রজাতির দেশি জলচর পাখি রয়েছে।
 
প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তার নেতৃত্বেই প্রতি বছর বাংলাদেশে জলচর পাখিশুমারিগুলো অনুষ্ঠিত হয়।
 
২০১৫ সালের পাখিশুমারি থেকে এবার ২০১৬ সালে বাইক্কা বিলে ১ হাজার ৮৪১টি পাখি বেশি পাওয়া গেছে। চলতি বছর বাইক্কা বিলে জলচর পাখি রেকর্ডের পরিসংখ্যান হলো ৬ হাজার ৯৯১টি।  
 
ইনাম আল হক জলচর পাখির সংখ্যাগুলো উল্লেখ করে বলেন, আমাদের এ বছরের গবেষণায় ধলা হাঁস (Cotton Pygmy-goose) ২০০টি, খয়রা-কাস্তেচরা (Glossy Ibis) ৮৬টি, গেওয়ালা-বাটান (Ruff) ১০৮৮টি এবং তিলা-লালপা (Spotted Redshank) ৬৬৪টি পাখি আমরা পেয়েছি। বাইক্কা বিলে এবার সৈকত পাখির সংখ্যা বেড়েছে।
 
পরিবেশ ও প্রকৃতির অনন্য এক বন্ধু পাখি। শুধু পাখি দেখার জন্যই নয়, প্রকৃতির মাঝে পাখির প্রজাতিকে বাঁচিতে রাখার জন্য পাখি শুমারির ফলে গবেষকেরা তুলে আনেন পাখিদের সংখ্যা, জাত-প্রজাতিসহ নানা তথ্য-উপাত্ত।

যে তথ্যগুলো সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাখিদের প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখার প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়। আমাদের দেশে এবার ৩০তম পাখিশুমারি এবং এশিয়াতে ৫০তম বৎসর উদযাপিত হলো। পাখিশুমারি গুরুত্ব সম্পর্কে এ কথাগুলো বলেন পাখিপ্রেমী ইনাম আল হক।

পর্যটন মৌসুমে ‍বাইক্কাবিলে আসে প্রচুর সংখ্যক দর্শনার্থী। জনপ্রতি ৩০ টাকা টিকিট কেটে ঢুকতে হয় বিলে। আর নৌকা নিয়ে যদি বিলের পানিতে ঘুরতে চান তাহলে প্রতি ঘণ্টায় জনপ্রতি ব্যয় করতে হবে ২শ টাকা। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বের বাইক্কায় আসতে নির্ভর করতে অটোরিকশা অথবা ব্যক্তিগত গাড়ির উপর। রিজার্ভ করলে খরচ পড়বে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।