ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিপ্রধান। তবে প্রতিনিয়তই কমছে দেশের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ।
উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পানিতে দিয়ে উপরে বিশেষ পদ্ধতিতে ট্রে বসিয়ে চাষ করার পদ্ধতিই হলো হাইড্রোপোনিকস। মাটি ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই ফসল চাষ করার এক অভিনব পদ্ধতি হাইড্রোপোনিকস।
এ পদ্ধতি বহির্বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে নতুন। এ পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম, টমেটো, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও শসাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিসহ অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব।
বাঁশের খুঁটি অবলম্বন করে কিছু পিভিসি পাইপ স্তরে স্তরে সাজিয়ে মাল্টি লেয়ার হাইড্রোপোনিকস তৈরি করে পাইপের ভিতরে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও এক সেট কাঠামো ১০-১২ বছর ব্যবহার করা যায়। তাই এ পদ্ধতি অনেক লাভজনক।
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জাহিদুর রহমান হাইড্রোপোনিকস নিয়ে দীর্ঘ চার বছর ধরে গবেষণা করছেন।
তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্স এবং ইউএসডিএ (BAS-USDA)’র একটি প্রকল্পের আওতায় শেকৃবি উদ্যানতত্ত্ব খামারে দেশীয় প্রযুক্তি ও কম খরচে ক্যাপসিকাম, রক মেলন, চাইনিজ বাঁধাকপি, টমেটো, লেটুসের হাইড্রোপোনিকস নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
হাইড্রোপোনিকস গবেষক ড. জাহিদুর রহমান বাংলাদেশসহ গ্রীষ্মপ্রধান দেশের কৃষকের কথা মাথায় রেখে হাইড্রোপোনিকস দ্রবণ তৈরি করেছেন। যার নাম রহমান অ্যান্ড ইনডেন দ্রবণ।
উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচলিত ফলনের চেয়ে ৯ গুণ বেশিফলন পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষক জাহিদ। এছাড়া হাইড্রোপোনিকস পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে জমি প্রস্তুত, পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগ ও আগাছা দমনের প্রয়োজন হয় না বলে উৎপাদন খরচ বহুলাংশে কমে যায়।
ড. জাহিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকরা উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় ১৬টি পুষ্টি উপাদান মাটিতে দিতে পারে না। এছাড়া মাটিতে কীটনাশক ও প্রয়োগ করা রাসায়নিক সার পানির স্রোত বা বাতাসে উড়ে অপচয় হয়। অন্যদিকে হাইড্রোফেনিকস পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট হারে সার আবদ্ধ পাত্রে দেওয়ায় অপচয় হয় না বললেই চলে।
গবেষক জানান, ১৬টি পুষ্টি উপাদান সঠিক অনুপাত ও সঠিক সময়ে দেওয়ার ফলে অল্প জমিতে অনেক বেশি ফলন পাওয়া যায়।
এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসল মাটিতে উৎপাদিত ফসলের চেয়েও পুষ্টি সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু হয় বলে তিনি মনে করেন।
তার এ প্রযুক্তি সাধারণ কৃষকসহ সব পেশার মানুষ সহজে ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদ, বারান্দা, বাড়ির আঙিনাসহ অব্যবহৃত ও অকৃষি জমিতে হাইড্রোপোনিকস পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব।
গবেষক জাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, এদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এ ধরনের পদ্ধতির বিকল্প নেই।
বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমদের কৃষিকে বিপন্ন করছে এবং ভবিৎষতে এর বিরূপ প্রভাব আরও পড়তে পারে, যা কাটিয়ে ওঠার জন্য এরকম চাষ পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে।
শেকৃবি গবেষণা সিস্টেমের (সাউরেস) ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক বেগ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইড্রোপোনিকস পদ্ধতি পরিদর্শন করে বাংলানিউকে বলেন, এ ধরনের গবেষণা আমাদের দেশের জন্য কৃষিতে সুফল বয়ে আনবে।
ড. জাহিদুর রহমানের অধীনে হাইড্রোপোনিকস নিয়ে কাজ করছেন স্নাকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী মাজহারুল, ফাতেমা, মিথিলা, ফাহিদা ও শরিফুল।
চলতি বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্স ও ইউএসডিএ প্রকল্পের আওতায় শেকৃবিতে কৃষকদের হাইড্রোপোনিকস পদ্ধতি নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন গবেষক ড. জাহিদুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
এএ/