ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

চোখ মেলেছে চায়ের কুঁড়ি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৬
চোখ মেলেছে চায়ের কুঁড়ি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রকৃতির পানে চোখ মেলেছে চায়ের নতুন কুঁড়িরা। প্রুনিং করার কিছু দিন পরই প্রতিটি গাছ এখন সবুজে অঙ্কুরিত।

ভরে উঠেছে নতুন পাতা আর কুঁড়িতে। বাগানের সেকশন জুড়ে এ যেন প্রস্ফুটিত নতুনের চির আহ্বান।

বৃষ্টি এসে ভালোবাস‍া ছুঁয়ে দেওয়ার পরই চা গাছগুলোতে যেন নবপ্রাণের সঞ্চার হয়েছে। কাটা চা গাছের প্রতিটি ডালের সঙ্গে বৃষ্টির এমন গভীর প্রণয় নতুন কিছু নয়! বহু পুরাতন!

তাই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় পূর্ণ হয় তার জেগে ওঠার এমন সম্মিলিত উচ্ছ্বাস। ক্লান্ত-তৃষিত চায়ের শরীর জুড়ে নামে বিন্দু বিন্দু কণা। সেই বিন্দুর মৃদুপরশ শিরা-উপশিয়ার মর্মতলে জাগায় প্রাণচেতনা। জাগায় চা শ্রমিক-মালিকের প্রসন্ন হাসি।

চা বাগান সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকেই তাই প্রুনিংয়ের পর আগাম বৃষ্টির জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন। এ বছর ছয় দিনে মোট ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য রেকর্ড করা হয়েছে।  
 
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাগছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চা গাছগুলো কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঠিক একই জায়গা থেকে প্রুনিংয়ের যে ছবিগুলো ধারণ করা হয়েছিলো সেখানে এখন সবুজ কচি কিশলয়।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র অবজারভার মো. হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সবশেষ ২৫ ফেব্রুয়ারি ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে ২২ ও ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি যথাক্রমে ৯ এবং ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত সংরক্ষণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২১ জানুয়ারি ২ মিমি, ১০ ফেব্রুয়ারি ২ মিমি, ১২ ফেব্রুয়ারি ৫১ মিমি এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি ৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সবগুলো মিলিয়ে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে।

ফুলছড়া চা বাগানের শ্রমিক প্রতিমা তন্তুবাই জানান, বৃষ্টি হলে খুব তাড়াতাড়ি চা গাছগুলো পাতা ছাড়ে। তাড়াতাড়ি পাতা ছাড়লে পাতা চয়নও তাড়াতাড়ি হয়।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর পরিচালক এবং চা বিজ্ঞানী ড. মঈন উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আগাম বৃষ্টিপাত আমাদের চায়ের জন্য খুবই মঙ্গলজনক। তবে একটা জায়গায় আমরা একটু ভয়ে থাকি সেটা হলো – মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলে মাঝামাঝি পর্যন্ত যদি খরা থাকে তাহলে নতুন কুঁড়িগুলোর বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে। আগাম বৃষ্টিপাতের বড় অসুবিধা হলো এটাই।

তিনি আরও বলেন, আগাম বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছে দ্রুত কুঁড়ি চলে আসে; কিন্তু পরে আবার যদি বৃষ্টিপাত না হয় তবে সেই কুঁড়িগুলো শুকিয়ে যায় এবং খাদ্য সংকটে ভোগে। তবে ইরিগেশনের মাধ্যমে তখন কৃত্রিমভাবে পানি দেওয়া হয়। এখন প্রত্যেক বাগানেই কম-বেশি ইরিগেশনের ব্যবস্থা আছে।

এ বছরের শুরুটা অত্যন্ত ভালো উল্লেখ করে ড. মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, আবার যদি মনে করেন ১০/১৫ বা ২০ দিন পর ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় তবে তা চায়ের জন্য দারুণ হবে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশে মোট ৬৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৪ সালের থেকে তা সাড়ে ৩ মিলিয়ন কেজি চা বেশি উৎপাদিত বলে জানান এ চা বিজ্ঞানী।  


** চায়ের প্রুনিং শেষ, এখন অপেক্ষা কুঁড়ির

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৪ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।