শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): চার বছর আগে দেখা পাওয়া বিরল প্রজাতির উভচর প্রাণীটিকে মৃত অবস্থায় ফের দেখা গেছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। মাটির গহ্বর থেকে উঠে আসা বিচিত্র এ প্রাণীটি এড়িয়ে যেতে পারেনি গবেষকদের সজাগ চোখকে।
অবিকল কেঁচোর মতো দেখতে প্রাণীটি। কিন্তু কেঁচো নয়। নয় দু’মুখো ছোট সাপও। তার বৈজ্ঞানিক নাম ‘চিকিলা ফুলেরি’ (Chikila Fulleri)। তবে এর বাংলা নাম নেই। বিচিত্র এ প্রাণীটিকে নিয়ে গবেষণার কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি বলে বাংলায় নামকরণও করা হয়নি।
এরা মাটির নিচেই বসবাস করে এবং খাদ্য সংগ্রহ, সংসার, প্রজনন- সবই মাটির অন্ত:পুরে। কেউ তার খবরই জানেনওনি অনেকদিন।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বপ্রথম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানেই এই বিচিত্র প্রাণীটিকে পাওয়া গিয়েছিল। বন্যপ্রাণী গবেষক দম্পতি প্রয়াত মুনির আহমেদ খান ও তানিয়া খান তখন প্রাণীটির সন্ধান পেয়েছিলেন। অবশ্য তখনও সেটি মৃতই ছিল।
সেটি দৈর্ঘ্যে ছিল ১১ ইঞ্চি এবং ব্যাস প্রায় ১ দশমিক ৮ ইঞ্চি। ছিল ছোট ছোট দাঁত। এর মুখের দৈর্ঘ্য প্রায় আধ ইঞ্চির কাছাকাছি। লেজবিহীন। দেখতে ছিল অনেকটা কেঁচো বা দু’মুখো সাপের মতো।
ঠিক একই প্রজাতির উভচর প্রাণীটিকে গত বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান তার কিশোর সহকারী রফিককে সঙ্গে নিয়ে বন পরিভ্রমণের সময় ফের দেখা পান।
গবেষকদের চোখে পড়তেই মুহূর্তেই তাকে ধরে ক্যামেরাবন্দি করা হয়।
বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ প্রাণীর গোত্রীয় নাম Chikilidae (চিকিলিডি)। বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে একটি ছড়ার পাশে চিকিলার দেখা পাই। দেখেই ভীষণ আশ্চর্য হয়ে পড়ি। হাতে নিয়ে দেখি, এটি মৃত। দৈর্ঘ্যে ছিল সাড়ে ৮ ইঞ্চি’।
তিনি আরো বলেন, ‘২০১২ সালের সেপ্টেম্বরেও মৃত চিকিলা পেয়েছিলাম। এ বছর ১৮ আগস্ট আবারও প্রজাতিকে মৃত পেলাম। অর্থাৎ ৩ বছর ১১ মাস পর। এ সময়টা কি চিকিলার কোনো কিছু ‘মিন’ করে? অর্থাৎ, এ সময় ডিম পাড়ে বা মাটির ওপরে এসে মরে যায় কিংবা দৃশ্যমান হয়?’
এ নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
এ প্রজাতির প্রথম প্রাপ্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সত্যভামা দাস বিজু পাঁচ বছর প্রাণীটিকে নিয়ে গবেষণা করেন। উত্তর ভারতের প্রায় দুই শতাধিক স্থানে গবেষণা জরিপ চালিয়ে পা ও লেজহীন উভচর এ প্রজাতির সন্ধান পান তিনি। মেঘালয়ের গারো অঞ্চলের মানুষেরা একে গারো ভাষায় চিকিলা নামে অভিহিত করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘ড. সত্যভামারাও ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ প্রজাতির দেখা পেয়েছিলেন। ভারতের আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে মাটি খুঁড়ে তারা চিকিলার সন্ধান পেয়েছেন। আর আমরা লাউয়াছড়াতেই পেয়েছিলাম ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে’।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বরেণ্য বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘উভচর প্রাণী বলতে আমরা এতোদিন ব্যাঙকেই জানতাম। কিন্তু ব্যাঙের পাশাপাশি আরো একটি প্রাণী রয়েছে, সেটি চিকিলা। এর জীবনযাত্রাও কেঁচোর মতো’।
তিনি আরো বলেন, ‘কেঁচো যেভাবে জীবনের বেশিরভাগ সময় মাটির নিচে কাটায়, মাঝে মাঝে মাটির ওপরে আসে, চিকিলাও তাই। লাউয়াছড়াতেই এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে এ প্রজাতিটিকে পাওয়া গেছে। তবে আমাদের চিরসবুজ অন্য বনগুলোতেও এদের থাকার কথা’।
লাউয়াছড়া এখন জীববৈচিত্র্যের মহা মূল্যবান কেন্দ্র। এর প্রতিবেশ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন থাকলে এখানকার বিরল বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্ব রক্ষা হবে বলে মন্তব্য করেন তানিয়া খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
বিবিবি/এএসআর