ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

প্রজন্মের মধ্যে হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৬
প্রজন্মের মধ্যে হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ইনানী থেকে: নকশিকাঁথাসহ হস্তশিল্পের নানাকিছু নিয়ে কাজ চলছিল বছরজুড়েই, কিন্তু প্রতিষ্ঠান আকারে যাত্রা শুরু হয়েছে মাসতিনেক হলো। এর মধ্যেই ব্যস্ততা বেড়ে গেলো স্মৃতি-শ্রাবণী-মাইমোনার।

তিনজনই ‘বি ক্র্যাফট’র ডিজাইনার। আগেই লিখেছি মাসতিনেকের কথা- তাই বি ক্র্যাফট নামটি একটু অপরিচিতই ঠেকবে!

 

বি ক্র্যাফট একটি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উপদেষ্টা-ডিজাইনার মিলিয়ে দশজনের কর্মীবাহিনী। অন্যদিকে, পার্বত্য এলাকায় বন ও বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ক্রিয়েটিভ কন্সারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ)। বনের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পাহাড়িরা যেনো ভিন্ন কোনো টেকসই পেশা সৃষ্টি করতে পারেন, সেই লক্ষ্য নিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তারা জোর দিচ্ছেন, হস্তশিল্পের দিকে। কিন্তু হস্তশিল্প বানালেই তো চলবে না- তাকে তো বাজারজাত করা চাই। ঠিক এখানেই এগিয়ে এসেছে বি ক্র্যাফট। সঠিক পরিকল্পনা ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে হস্তশিল্পকে তুলে ধরবেন তারা।

 

এজন্য এ দুই প্রতিষ্ঠান মিলে আয়োজন করেছে একটি কর্মশালার। যেটিকে তারা বলছেন, জ্ঞান বিনিময় কর্মশালা। আরও পরিষ্কার করে বললে, ঐতিহ্য ও আধুনিকতা বিনিময়। একদিকে, ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক নিপুণতা নিয়ে ১৩ জন মুরং (ইংরেজিতে ম্রো) এবং অন্যদিকে, স্মৃতি-শ্রাবণী-মাইমোনাদেরর মতো পেশাদার আধুনিক ডিজাইনার।

হস্তশিল্প তৈরির ক্ষেত্রে আমরা তাদের কৌশলটিও শিখছি। আরও অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে যেমন- চাকমা, মারমা, মণিুপুরী; কিন্তু তারা সমতলের জনসাধারণের সঙ্গে মিশতে শুরু করার ফলে তাদের হস্তশিল্পের বেশ পরিচিতি রয়েছে। সেদিক দিয়ে মুরংরা সেভাবে এখনও মিশে উঠতে পারেননি। তাদের হাতে তৈরি গয়না, বাঁশের জিনিস, তাঁতের কাপড় সবদিক দিয়ে ভিন্ন। সিসিএ টিম দীর্ঘদিন তাদের সঙ্গে মিশে আন্তরিকতা ও বিশ্বাসের সেই জায়গাটি তৈরি করেছে বলেই আজ তাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ ঘটেছে, বিষয়কেন্দ্রিক আলাপে বলেন বি ক্র্যাফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশীন খায়ের।

একই সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠান ম্যাপিং ও ডক্যুমেন্টেশনের কাজটিও করছে। কোন এলাকায় কী ধরনের হস্তশিল্প রয়েছে, কী পরিসরে রয়েছে প্রভৃতি সংরক্ষিত তথ্য আকারে লিপিবদ্ধ করছেন তারা। যেনো পরবর্তীতে বিষয়ভিত্তিক ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হয়।

তাদের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, হস্তশিল্প এখন বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা তাদের আগে প্রজন্মের কাছ থেকে শিখেছেন, কিন্তু নতুন প্রজন্ম এই কাজগুলো শিখতে আগ্রহী নয়। এর নানামুখী যৌক্তিক কারণও রয়েছে বৈকি। যেমন, দিন দিন ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পগুলো বাজার চাহিদা হারাচ্ছে।

এর কারণ হিসেবে বি ক্র্যাফটের সিনিয়র ক্রিয়েটিভ সুপারভাইজার জাফরুল হাসান লিমন বললেন, মুরংদের কথাই ধরেন, তারা দুই থেকে তিন ধরনের ঝুড়ি বানান। তাদের জীবনযাপন ও প্রয়োজন অনুযায়ী ঝুড়িগুলো বানানো হয়। সেগুলো আমাদের প্রয়োজনের সঙ্গে খাপ খাবে না এটাই স্বাভাবিক। আমি বড়জোর সংগ্রহের জন্য একটি রাখতে পারি। কিন্তু এরপর? এভাবেই বাজার ছোট হয়ে আসছে। আর তারাও কখনও আধুনিক বাজারে পৌঁছাতে পারবেন না। বি ক্র্যাফট যেটি করছে, তাদেরকে নানান টাইপের ঝুড়ির ডিজাইনটা দিচ্ছে। ঝুড়ি তারা বানাতে পারেন কিন্তু আধুনিক ডিজাইন তাদের নেই। এভাবে তাদের হাতে তৈরি জিনিসপত্র আমরা আধুনিক বাজারের উপযোগী করে তুলছি। তাতে তারা অর্থনৈতিকভাবে আরও লাভবান হবেন।

কথার সূত্র ধরে নওশীন যোগ করেন, পাশাপাশি তাদের ফাংশনালিটিটাও আমরা শিখছি এবং ডক্যুমেন্টেশন করছি। তাদের জুয়েলারি খুবই সূক্ষ্ণ কারুকাজের। জুমচাষের পর মাটির নিচ থেকে তোলা এক ধরনের মধুকে তারা আঠা হিসেবে কাজে লাগিয়ে সুতায় পুঁতি গেঁথে গেঁথে গয়নাগুলো তৈরি করেন। কতো ইউনিক একটি ব্যাপার। তাদের প্রাকৃতিক সুতায় তৈরি কম্বল-কাপড়ে জোড়া ফোড়ের সেলাই কতো নান্দনিক দেখায়! এগুলোতেই যদি বৈচিত্র্য আনা যায় তাহলে বাজারের পরিসরটাও বেড়ে যায়।

তিন দিনব্যাপী এ কর্মশালার প্রথম দিন বুধবার (০৫ অক্টোবর)। সকাল থেকেই কাজের মহাযজ্ঞ। দুই বিপরীতধর্মী জ্ঞান বিনিময়ে মেলবন্ধনের সেই জায়গাটি কি দাঁড়াচ্ছে?

নওশীনের উত্তর, হ্যাঁ নিশ্চয়। তারা তো কাজগুলো জানেন। সেগুলোই ভিন্ন ডিজাইনে করছেন। আমরা ছবি দিয়ে দিচ্ছি, সেগুলো দেখে দেখে হুবহু বানিয়ে ফেলছেন। এগুলো ডক্যুমেন্টেশনের পাশাপাশি তাদের মডেল করে প্রডাক্ট শ্যুটও করছি। আমরা চাই, তাদের জিনিস তারাই তুলে বাজারে ধরুক। সেইসঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক দিক যেমন- গান, নাচ প্রভৃতিও ডক্যুমেন্টেশন করা হচ্ছে।

সাঙ্গু-মাতামুহুরী নদীর চারপাশ ঘিরে মুরং জনগোষ্ঠীর বাস। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের নানা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তারা দীর্ঘদিনের আবাসস্থল ছেড়ে অন্যজায়গায় পাড়ি জমাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময়ের পর তাদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের সঙ্গে সঙ্গে তারাও বিলুপ্ত হয়ে যাবেন। তার আগেই প্রজন্মের মধ্যে হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরি, বেশ জোর দিয়েই বললেন নওশীন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৬
এসএনএস

** ঐতিহ্য ও আধুনিকতা বিনিময়ের কর্মশালা
** কক্সবাজারে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কর্মশালা 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।