বাঁশগুলো লম্বা চটাকৃতির করে কেটে কেটে রাখছেন ইউসুফ আলী। বনের ভেতর থেকে আরও বাঁশ কেটে আনতে গেছেন সাত্তার মিয়া।
** লাউয়াছড়া পিকনিক স্পটে গাছ রোপণ করলো বাংলানিউজ
উপলক্ষ, বন ও বন্যপ্রাণীর জন্য একশো গাছ লাগাবে বাংলানিউজ। বন ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে লাউয়াছড়ায় গাছ লাগানোসহ নানা উদ্যোগ বাংলানিউজ আগেও নিয়েছে এবং নিয়ে চলেছে। সেই ধারাবহিকতারই অংশ এটি। গাছ লাগানোই মূল উদ্দেশ্য, সেটি কেন্দ্র করে আনন্দ-উৎসব ও প্রকৃতির সান্নিধ্য বাড়তি পাওয়া। ‘একটি বাংলানিউজ উদ্যোগ’ হিসেবে এ বৃক্ষরোপণ কর্মযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় ছিলো শুক্রবার (২৬ মে) সকাল ১০টা। যথাসময়ে নিজ হাতে জাতনিম গাছ লাগিয়ে শুভারম্ভ করেন বাংলানিউজের শ্রদ্ধেয় এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। পাতা ও গাছের ছালে (বাকল) অসংখ্য ভেষজ গুণাগুণের পাশাপাশি নিম ফল পাখিদের খুব প্রিয়।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ওয়াইল্ড লাইফ, মৌলভীবাজার) মিহির কুমার দো লাগান জলপাই গাছ। দীর্ঘজীবিতার পাশাপাশি উপকারী ফল ও ঔষধি গুণাগুণের জন্য জলপাই গাছের ব্যাপক সুনাম।
এরপর সহকারী বন সংরক্ষক (ওয়াইল্ড লাইফ, মৌলভীবাজার) তবিবুর রহমান আতা এবং বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও বাংলানিউজের সুহৃদ আবু সিদ্দিক মো. মুসা চালতা গাছ লাগান।
লাউয়াছড়ায় বন ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সবসময় বাংলানিউজকে নানাভাবে পাশে পেয়েছি, বলেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার।
সঙ্গে সঙ্গে বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফের উত্তর, আপনাদের, বিশেষ করে আপনার সহযোগিতা ও আন্তরিকতা ছিলো বলেই বাংলানিউজ এরকম উদ্যোগ বারবার নিতে পেরেছে।
লাগানো সহজ কিন্তু সঠিক পরিচর্যায় গাছ বাঁচিয়ে রাখাই কঠিন, যোগ করেন তিনি।
পাশে থাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক গাছের পরিচর্যার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন। সেইসঙ্গে জুলফুকে কে বলে দেন সার্বক্ষণিক পরিচর্যা নিতে।
এবারের উদ্যোগে নয় রকমের ফলজ, বনজ ও ভেষজ গাছ লাগানো হয়েছে। বনে গাছের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বন্য পশু-পাখিদের আবাস ও প্রিয় ফলের কথা মাথা রেখে গাছ বাছাইয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মহাষৌধি হিসেবে কয়েকটি গাছও রাখা হয়েছে তালিকায়।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে আরও তিনটি গাছ লাগান বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ। এগুলো হলো- হরিতকি, আমলকি ও বট।
ত্রিফলার (আমলকি, হরিতকি ও বহেড়া) প্রধান দুই গাছ আমলকি ও হরিতকির ঔষধি গুণাগুণের কথা অনেকেই হয়তো জানে না।
আমলকি গাছ ৮ থেকে ১৮ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হতে পারে, পাতা ঝরা প্রকৃতির। হালকা সবুজ পাতা, যৌগিক পত্রের পত্রক ছোট, ১/২ ইঞ্চি লম্বা হয়। হালকা সবুজ স্ত্রী ও পুরুষফুল একই গাছে ধরে। ফল হালকা সবুজ বা হলুদ ও গোলাকৃতি। এর ঔষুধি গুণ অসংখ্য। উল্লেখযোগ্য গুণগুলো হলো- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে, বমি বন্ধ, দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক, দাঁত-চুল ও ত্বক ভাল রাখে, খাওয়ার রুচি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল, রক্তাল্পতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ। গবেষণায় বলা হয়, আমলকি ক্যান্সারের কোষ বাড়াতে বাধা দেয়।
আর হরিতকি বহুগুণ সম্পন্ন ভেষজ গাছ। এর ফুল ফোটে ডালের শেষ প্রান্তে। রং হালকা হলুদাভ সাদা। ফল লম্বাটে, মোচাকৃতি। এই ফল বছরের পর বছর ভালো থাকে। গাছ প্রায় ৬০ পর্যন্ত লম্বা হয়। হরিতকি দেহের রক্ত পরিষ্কার করে, একইসঙ্গে দেহের শক্তি বাড়ায়। এটি রক্তচাপ ও অন্ত্রের খিঁচুনি কমায়। হৃদপিণ্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে হরিতকি। এটি পরজীবীনাশক, পরিবর্তনসাধক, অন্ত্রের খিঁচুনি রোধক এবং স্নায়ুবিক শক্তিবর্ধক। হরিতকি কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, অবসাদ এবং অধিক ওজনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে, প্রশস্ত ছায়ার পাশাপাশি পশু-পাখির আশ্রয়স্থল ও ফল মহাউপকারী। বলা হয়ে থাকে, বট ছাড়া বনায়ন অসম্পূর্ণ।
শুরু তো হয়েই গেলো। এরপর দিনব্যাপী বাকি গাছ লাগানো এবং এরপর থেকে সেগুলো পরিচর্যার পালা। এরও কার্যক্রম থেমে নেই। যে যেভাবে পারে হাত লাগাচ্ছে। কেউ কোদাল এগিয়ে দিয়ে, কেউ নিজ হাতে গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে কাজ। এই মহতী উদ্যোগে অবদান রাখার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে সবাই যেনো নারাজ! একে একে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিবারে যোগ হচ্ছে নতুন সদস্য।
যেহেতু গাছগুলো পিকনিক স্পটে লাগানো হচ্ছে, এজন্য পর্যটকদের কাছে অনুরোধ রাখলেন বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ, এই জায়গাটিতে পর্যটকদের আগমন ঘটবে সবচেয়ে বেশি। বড়রা যেনো ছোটদের সচেতন ও সতর্ক করেন গাছের ডাল ও পাতা না ছিঁড়তে। গাছগুলো যেনো সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে সেই পরিচর্যার দায়িত্ব আমাদের সবার।
বাংলানিউজ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
এসএনএস