অন্য দিনগুলোর মতোই শুক্রবারের (৭ সেপ্টেম্বর) সকালটা ‘লিফ মাংকি’দের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। ঘুম থেকে উঠে যে যার মতো বেড়িয়ে পড়ে খাদ্যের সন্ধান নামক টিকে থাকার সংগ্রামে।
লাউয়াছড়ার বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন তখন গেটের সামনে রাতজাগা চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখা হতেই বলে উঠলেন, ‘ওদিকটায় অনেক চশমাপরা হনুমান এসেছে। অনেকগুলো দেখলাম, চলুন তাড়াতাড়ি যাই। ...’
এ কথায় চমক লাগলো ঢের! দেরি না করে শুরু হয়ে গেল তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে চলা। বুনো মাকড়সার জালসম্বলিত বনের হালকা ডালগুলো আমাদের স্বাগত জানালো। কোনো মাকড়সাই চোখে না পড়লেও পরিত্যক্ত এই জালগুলো যেন বনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জানাতে লাগলো।
মাকড়সাদের বসতবাড়ির নির্জনশূন্যতাকে ধ্বংস করতে মন একদম রাজি হলো না। ভিন্নপথে পা বাড়ালাম। তাতে কিছুটা বিলম্ব হবার সমূহ সম্ভাবনা। তবু ধ্বংস-অপরাধের অনুশোচনা থেকে তো মুক্তি!
চিৎকার, চ্যাঁচামেচি আর খুনসুটি! এভাবেই লাউয়াছড়ার চশমাপরা হনুমানগুলো গাছে গাছে তাদের প্রভাত সমাবেশের আয়োজন করে বসেছে। চকচকে ধূসরাভ আর কালচে আবরণের এই স্তন্যপায়ীগুলো উঁচু ডালগুলোতে তাদের নিত্যদিনের লম্ফ-ঝম্প শুরু করে দিয়েছে।
৮-১০ সদস্য নিয়ে এদের এক একটি দল। প্রতিটি দলে দু-তিনটি শিশুও রয়েছে। কেউ গাছের কচিপাতা, ফল ও কাণ্ড ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ায় মশগুল থাকলে, অন্যটা এসে আবার তার খাবারে ব্যাঘাত ঘটাতে ব্যস্ত। এভাবেই ডালে ডালে ঘুরে খাদ্যের সন্ধানে কাটিয়ে দেয় সকালটা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর এবং প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ও লেখক ড. মনিরুল এইচ খান বাংলানিউজকে জানান, ‘বাংলাদেশের লিফ মাংকিগুলো শংকটাপন্ন অবস্থাতে আছে। কারণ ওদের বসবাস বনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের বনে। বনগুলো যেহেতু নানা কারণে কমে যাচ্ছে তাই এদের অস্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই হুমকির মুখে। বিশ্বের প্রেক্ষাপটেও অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে এরা’।
লিফ মাংকি মূলত দলভুক্ত প্রাণী। দলের সঙ্গেই ঘুরে বেড়ায় অধিকাংশ। তবে কখনো জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। হনুমানগুলো বেশিরভাগ সময় গাছের কচিপাতা খায়। পাশাপাশি ফল, কাণ্ড, পাখির ডিম প্রভৃতি খেয়ে থাকে। মাথাসহ এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮
বিবিবি/এনএইচটি