ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বন্যপ্রাণীর প্রিয় খাবার ‘ছাতিম’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৮
বন্যপ্রাণীর প্রিয় খাবার ‘ছাতিম’ মনোমুগ্ধকর ছাতিম। ছবি : ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন

মৌলভীবাজার: মাদকতাময় গন্ধযুক্ত ফুল ছাতিম। গাছের নিচে দিয়ে হেঁটে গেলেই এ ফুলের মৃদু গন্ধ মৃদু বাতাসে ভেসে এসে হৃদয়কে আকুল করে তোলে। সে মুহূর্তেই চোখ বিমুগ্ধ হয়ে খুঁজতে চায়- কোথায় ফুটেছে এই পুষ্পমঞ্জরী।

এখন সময় ছাতিমের। গাছে গাছে গুচ্ছগুচ্ছ সৌন্দর্য নিয়ে ফুটে আছে ছাতিম ফুলগুলো।

আপনা থেকেই মৃদুগন্ধ বিলিয়ে গাছের উচ্চশাখায় তার অধরা অবস্থানের কথা নিভৃতে জানান দিয়ে যায়। প্রকৃতিপ্রেমীদের কেউ কেউ গাছের নিচে এসে প্রাণভরে এর সতেজগন্ধ গ্রহণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, এই ফুলের ইংরেজি নাম Devil Tree এবং বৈজ্ঞানিক নাম Alstonia scholaris। সংস্কৃতিভাষায় এই গাছকে ‘সপ্তপর্ণা’ বলা হয়। এটি ভারতসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার গাছ। মনোমুগ্ধকর ছাতিম।  ছবি : ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনএই গাছ প্রায় ৪৫ মিটার অর্থাৎ প্রায় দেড়শ’ ফিটের মতো পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর কাঠ হচ্ছে হালকা। লেখার বোর্ড, ম্যাচের কাঠি, বাক্স প্রভৃতি তৈরি হয় এই কাঠ দিয়ে।

এর ফলগুলো তীরের মতো চিকন ও লম্বা হয়। একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর এর পাতাগুলো তিন থেকে দশটা গুচ্ছ হয়ে কাণ্ডের গাছে সর্পিল আকারে সজ্জিত থাকে। পুষ্পগুচ্ছ এবং পত্রগুচ্ছের কাঠামো খুব স্মার্ট দেখতে। বড় বৃক্ষে এমন পুষ্পবিন্যাস অন্য কোনো গাছে এমনভাবে দেখা যায় না বলে জানান তিনি।   

এর ওষুধি গুণাগুন সম্পর্কে ড. জসীম উদ্দিন বলেন, এই গাছের বাকলের রস জ্বর, ম্যালেরিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, ডিসেন্ট্রি, আলসার প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে উপকারী। এই গাছের সাদা কস আলসার এবং চর্মরোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে।

তিনি ‘ছাতিম বনাম হনুমান’ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৯৮ সালে আমি তখন রেমাকালেঙ্গা অভয়াশ্রমে গবেষণার কাজ করছি। গভীর রাতের দিকে ডাকবাংলোর টিনের চালে তুমুল শব্দে চমকে উঠি। গাছ থেকে কে যেন বারবার টিনের চালে ঝাপ দিয়ে পড়ছে। রাতে আর কিছুতেই ঘুমতেই পারলাম না সেদিন। পরে ভোরের দিকে দেখি ছাতিমফুলের পুরো গাছে হনুমানের লেজ ঝুলতেছে। বন্যপ্রাণীগুলো আপনমনের আনন্দে খুব মজা করে ছাতিম ফুলগুলো খাচ্ছে। মানে মহা খুশি তারা। বিশেষ করে চশমা হুনুমানের (Phayre’s Leaf Monkey) প্রিয় খাবার এই ছাতিম ফুল।  

এ ফুলগুলো দারুণ মুগ্ধময় গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে শীতের আগমনী বার্তা জানায়। তবে ফুলগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয় না। ফুল ফুটে আর ঝরে। সর্বসাকুল্যে এক-দেড় সপ্তাহ পর্যন্ত গাছে ফুল ফুটতে দেখা যায় বলে জানান উদ্ভিদ গবেষক ড. জসীম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৮
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।