মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইউটিলিট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘অনিয়ন্ত্রিত দূষণে ঢাকা: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করে নগর পরিকল্পনাবিদরা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্ল্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ক্রমেই ঢাকা দূষিত নগরীর তালিকায় শীর্ষে চলে আসছে।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার ৫৯টি এলাকা, ১০টি জোনের সব ক’টিতেই দূষিত পানি রয়েছে। শব্দদূষণ রয়েছে উদ্বেগজনক মাত্রায়, এর জন্য আইন থাকলেও এক যুগের বেশি সময় ধরে এর কোনো প্রয়োগ নেই। তবে সচিবালয় এলাকায় শব্দদূষণ রোধে আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এটাকে স্বাগত জানাই। তবে ঢাকার দূষণের জন্য ৫৬ দায়ী ইটভাটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কেনো হাইকোর্টকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ আগে থেকেই নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তবে এখনই ঢাকাকে দূষণ থেকে বাঁচাতে ‘গ্রিন বেল্টের’ ব্যবহার করতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, আমাদের উন্নয়ন চলাকালে অনেকেই মেয়রের ক্ষমতা নিয়ে কথা বলে বিতর্ক তৈরি করেন। আমাদের বিতর্ক না, এখনই সমন্বয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আজ সচিবালয় এলাকাকে শব্দ দূষণরোধে জেল-জরিমানার কথা বলা হয়েছে কেন। এটাতো পুরো ঢাকার জন্য করতে হবে, শহরের জন্য করতে হবে। আমাদের বায়ূদূষণ ১২ থেকে ১৭-তে চলে গেলো ইটভাটার জন্য। অথচ এখনও তেমন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। টেকসই উন্নয়ন করতে চাইলে দূষণের কারণে নাগরিকরা ধুঁকে ধুঁকে মরবে আর উন্নয়নের কথা বলবেন এটা হতে পারে না।
নগরবিদ আকতার মাহমুদ বলেন, আমরা যে পরিকল্পনার কথা বলছি তা সংখ্যাতাত্ত্বিক- এ থেকে সরে আসতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে হবে ‘গুনগত উন্নয়ন’। যেটা হবে টেকসই উন্নয়ন। পরিবেশ দূষণ রেখে কখনই টেকসই উন্নয়ন হয় না।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, দূষণের জন্য বড় সমস্যা জনসংখ্যা, উন্নয়ন-অবকাঠামো ও পলিসিগত কারণ। ১৯৭৩ সালের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহর আজকের অবস্থায় আসতো না। আমি নরসিংদী বসেই ট্রেনযোগে অফিস করতে পারতাম। কিন্তু এখন উন্নয়ন হচ্ছে প্রাইভেটকারের, নতুন নতুন যাবাহনের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ট্রাফিক জ্যামে পড়ে কর্মঘণ্টা নষ্ট করছি। অথচ নির্দিষ্ট সময়ের কাজ ট্রাফিক জ্যামে আটকে যাওয়া মানুষের হরমনের সমস্যা তৈরি হয়, ক্ষতিকর জীবানু শরীরে বাসা বাঁধে। ধীরে ধীরে ব্যক্তির হার্টে আক্রমণ করে। এটা সব শ্রেণি-পেশার হতে পারে, তবে গণমাধ্যমের বেশি হয়। একটি অনুষ্ঠান শেষে আবার আগুন লাগার খবরে যান, পরে সেখান থেকে আবার দুর্ঘটনার খবর সংগ্রহ.., এভাবে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
ডুরা সভাপতি মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
ইএআর/এএ