রাজশাহী আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ কামাল উদ্দিন জানান, রাজশাহীর ওপর দিয়ে মূলত গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এর মধ্যে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর মাঝেমধ্যে সামান্য বাড়লেও শীতের কোনো হেরফের হচ্ছে না। সকাল গড়িয়ে দুপুর পার হয়ে গেলেও দেখা মিলছে না সূর্যের। দিনের বেলায় সূর্যের বিলম্বিত দর্শন রাতে শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছেন দিনমজুর, ভিক্ষুক, রিকশাচালকসহ নিম্নআয়ের মানুষ।
তাই শীত থেকে বাঁচতে এসব মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে এখন রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকান। বুধবার সকালে সাহেববাজার জিরোপয়েন্টের ফুটপাতে উল্লেখ সংখ্যক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ফুটপাতের দোকানিদের হাঁকডাকই জানান দিচ্ছিলো যে শীত তাড়ানোর জন্য সেখানে গরম কাপড় কমদামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বরাবরের মতন সাধারণ দোকানিদের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের সেই একই অভিযোগ ‘দাম বেশি’।
এরপরও আপন খেয়ালে সুর ও ছন্দ দিয়ে দোকানিরা ডাকছেন- ‘আসেন আপা, দেইখ্যা লন, বাইচ্ছা লন, যেটা নেবেন মাত্র ১০০ টাকা, ১৫০ টাকা’। দাম সাধ ও সাধ্যের মধ্যেই হওয়ায় তাদের এমন ডাকে সাড়া দিচ্ছেন নিম্নআয়ের অনেকেই। শুধু একটি দোকানই নয়, শীত বাড়তে থাকায় মহানগরীর মোড়ে মোড়ে এখন বসেছে এমন অস্থায়ী গরম কাপড়ের দোকান। যাদের মাধ্যমে নিম্নশ্রেণির মানুষরা কম দামে কাপড় পাচ্ছেন আবার দোকানিরাও লাভবান হচ্ছেন।
মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট ঘেঁষে গড়ে ওঠা ফুটপাতে শীতবস্ত্র কিনছিলেন মরিয়ম বেগম নামে এক গৃহিণী।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মার্কেট থেকে বেশি দাম দিয়ে ভালো গরম পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই। এর কারণে ফুটপাত থেকে মেয়েদের জন্য কিনছি। কিন্তু যেই সোয়েটার গত বছর ২৫০ টাকা করে কিনেছি এবার সেটা ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই দাম আরও কম হলে ভালো হতো। আর যারা ডেকে ডেকে শীতবস্ত্র বিক্রি করছেন তাদের কাছে কাপড়ের সাইজ মেলানোই দায়-যোগ করেন এই গৃহিণী।
মহানগরীর গণকপাড়া মোড়ে শীতের পোশাক কিনতে এসেছিলেন আক্তারুল ইসলাম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ক’দিন ধরে শীত বাড়ছে। তাই সন্তানদের জন্য পোশাক কিনতে এসেছি। হঠাৎ করে শীত বেশি হওয়ায় গরম কাপড়ের দামও বেশি চাচ্ছেন দোকানিরা। সব শিশুদের কাপড়ের দাম চাওয়া হচ্ছে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তাহলে কীভাবে কী হয় বলেন, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তবে কেবল মরিয়ম বা আক্তারুলই নয়, বেশিরভাগ ক্রেতারই কমবেশি একই অভিযোগ। কিন্তু এতে কারও কিছুই করার নেই! শীত থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় কেনা লাগবেই। এর কারণে দাম বেশি হলেও তা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা।
এ বিষয়ে কথা হয় সাহেব বাজার এলাকার ফুটপাতের গরম কাপড় ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে ঠাণ্ডা বেশি পড়ায় আমাদের বেচাকেনা বেশ ভালো হচ্ছে। আমাদের দোকানে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা পর্যন্ত জ্যাকেট রয়েছে। তাছাড়া কিছু মোটা শার্ট রয়েছে। যেগুলো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরেই বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, অনেকে ঘুরে যাচ্ছে দাম বেশি বলে কিন্তু আমাদের কিছুই করা নেই। আমরা সামান্য খুচরা ব্যবসায়ী। আমরা যে দামে কিনি সেখান থেকে কিছু লাভ করে বিক্রি করতে হয়।
কথা হয় গণকপাড়া এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের সারাবছর তেমন ব্যবসা হয় না। শীত এলেই ভালো ব্যবসা হয়। যেমন বর্তমানে মোটা ফুলহাতা গেঞ্জি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি এবং পাতলাগুলো ১৫০ টাকা দরে। বিশেষ করে বর্তমান বাজারে হুডির চাহিদা বেশি। হুডি বিক্রি করছি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। গোল কলারের মোটা গেঞ্জি দাম ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।
এছাড়া শিশুদের পায়জামা ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত এবং শিশুদের মোটা কাপড়ের গেঞ্জির দাম ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। টুপি ৫০-১০০ টাকা, শিশুদের হাতমোজা ৩০-৭০ টাকা এছাড়াও শিশুদের সেট ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে বলেও জানান এই ফুটপাতের এই কাপড় ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯
এসএস/এএটি