রংপুর: ১০০ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমান বৃষ্টির হওয়ায় দ্বিতীয় দিনেও সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ভাসছে রংপুরের অধিকাংশ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
এর আগে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় রংপুরের ইতিহাসে প্রথম এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর মুলাটোল, মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা এলাকা, মুন্সিপাড়া, গোমস্তপাড়া, গুপ্তপাড়া, খলিফাপাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সর্দারপাড়া, ঈদগাহপাড়াসহ অনেক এলাকায় এখনো হাঁটু ও কোমরপানি রয়েছে। এখনো পানির নিচে এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। ফলে এসব এলাকার অনেক পরিবার আশ-পাশের স্কুল-কলেজের উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই আত্মীয়দের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। আশ্রয় নেওয়া এসব পরিবারকে স্বেচ্ছাসেবীরা নিজ উদ্যোগে খিচুড়িসহ শুকনো খাবার বিতরণ করছেন। তবে নগরীর বেশকিছু এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ঘরে ফিরেছেন স্থানীয়রা। নষ্ট হয়ে যাওয়া আসবাবপত্র শুকিয়ে নিচ্ছেন তারা। তবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেনি তারা। এদিকে ২য় দিনেও এমন জলাবদ্ধতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পানিবন্দি মানুষ। স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেওয়া মানুষরা উৎকন্ঠায় সময় অতিবাহিত করছেন। তাদের অভিযোগ সিটি কর্পোরেশনের অবহেলায় অপূরণীয় ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
আগাম কোনো সতর্কবার্তা না দেওয়ায় হঠাৎ এই দুর্যোগে বিপাকে পড়েছেন তারা। কিন্তু এখনো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা কেউ তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন। তারা মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এদিকে নগরীর পানিবন্দি এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি।
নগরীর মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা আদম আলী বাংলানিউজকে বলেন, পাশের স্কুলে রোববার থেকে পরিবার নিয়ে আছি। বাড়ির বিছানার ওপরেও এখনো পানি। কেউ কোন খোঁজ নিচ্ছে না। অসহায় হয়ে এখানে পড়ে রয়েছি।
অন্যদিকে এমন জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে নগরীর শ্যামাসুন্দরী খালের ভরাট হওয়াকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে আবর্জনায় ভরে গেছে এসব ড্রেনেজ। ফলে পানি নেমে যেতে পারছে না।
নদী-গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পরিষ্কার করতে হবে। শ্যামাসুন্দরী খালসহ বিভিন্ন খালগুলোর সঙ্গে নদীর সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে দ্রুত পানি নেমে যাবে। নাহলে আবারও এমন চিত্র দেখতে হতে পারে।
এ বিষয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ঢাকা থেকে মোবাইলফোনে এ ঘটনায় নগরবাসীকে দোষারোপ করে সাংবাদিকদের বলেন, মানুষজন অসচেতন হয়ে ড্রেনে ও খালে ময়লা আবর্জনা ফেলায় পানি যেতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
এএটি